প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিস্টেম বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অবাস্তব ও অতিমূল্যায়িত ফিজিবিলিটি স্টাডির মাসুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ১৫ বছর মেয়াদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এই স্যাটেলাইট এখনো লাভের মুখ দেখেনি। বরং লোকসানের আশঙ্কাই বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, এই শ্বেতহস্তী পালনে রাষ্ট্রের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে হাজার কোটি টাকারও বেশি।
অথচ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কিংবা ক্ষমতাসীনদের জবানিতে তখন একে অত্যন্ত লাভজনক একটি প্রকল্প বলেই উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উপগ্রহ উত্ক্ষপণের ছয় বছর পরও সম্ভাব্য বিদেশি গ্রাহক দেশগুলোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় ও ল্যান্ডিং রাইটস পাওয়ার কাজটি সম্পন্ন হয়নি। এখন এর সময়ও শেষ। আবার এসংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণের সময় যেসব দেশে এর ট্রান্সপন্ডার বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছিল, বাস্তবতা তার বিপরীত।
’ তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের মতেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য যে বিনিয়োগ হয়েছে তা উঠে আসার সম্ভাবনা নেই। সঠিকভাবে বাজার যাচাই না করেই এ খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। শুরুতে মার্কেটিংয়ের দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে যেভাবে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা কমছে, তাতে বিক্রি না হওয়া ট্রান্সপন্ডারগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বলে মনে হচ্ছে না।
প্রকল্প লাভজনক না হলেও ব্যয় যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, সুদে-আসলে তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই প্রকল্পে ২০১৬ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয় ১২ বছর মেয়াদে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ইউরো। গত এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ ১২টি কিস্তিতে এইচএসবিসিকে ১০১.৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বিটিআরসি। ২০২৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলারের আরো আটটি কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
প্রকল্প এখন বাদ দেওয়া যাবে না। একে কিভাবে লাভজনক করা যায়, সে চেষ্টাই করতে হবে। আর এই প্রকল্পের নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।