প্রতিবছরের মতো এবারও নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবস পালন করেছে পুরান ঢাকার মানুষ। স্মরণ করেছে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের। ২০১০ সালের ৩ জুন এই পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল ১২৫ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন।
ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা যে কত বিপজ্জনক তা প্রমাণিত হয়েছিল ২০১০ সালের ৩ জুন সন্ধ্যায়। সেই দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজটি করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে যেন ২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর নিমতলীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল পুরান ঢাকার বনেদি এলাকা চকবাজারে।
সেই রাতে সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পৃথকভাবে তদন্ত করে বিভিন্ন সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন দেয়। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই পুরান ঢাকায় আগুনের ঝুঁকি মোকাবেলায় রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনারই উৎস রাসায়নিকের গুদাম। এমন আরো অন্তত অর্ধশত আগুনের ঘটনার তথ্য এলাকাবাসীর জানা। তবু সেই রাসায়নিকের সঙ্গেই বাস করতে বাধ্য হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। আর কতজন লাশ হলে রাষ্ট্র পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নেবে—এমন প্রশ্ন পুরান ঢাকাবাসীর।
অবাক করার মতো ঘটনা হচ্ছে, ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের দায়সারা একটি সাধারণ ডায়েরির মধ্যেই থেমে রয়েছে তদন্তকাজ। এমনকি যে রাসায়নিক গুদামঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল সেই গুদামের মালিকের নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই সেখানে।
ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নেওয়ার ছিল। সেদিন শিক্ষা নিলে আজ পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটত। কিন্তু সব প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ এখন পর্যন্ত শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরানো হয়নি রাসায়নিকের গুদাম। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের। পুরান ঢাকা থেকে অবিলম্বে সব রাসায়নিকের কারখানা, দোকান ও গুদাম সরাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।