১৪শ’ লিটার ধারণক্ষমতার একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে যেখানে ব্যয় ১১০ টাকা ও কিছু পরিবহন খরচ, সেখানে এ অক্সিজেন সিলিন্ডার বাবদ রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। করোনাকালীন রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ার পর গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এলে ৬ জুলাই ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তারপর থেকে প্রায় দেড় মাস সময় পার হয়ে গেলেও রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) বলছেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে আরও সময় লাগবে; কারণ এতে অনেক পক্ষ জড়িত। স্বাস্থ্য খাতে জেঁকে বসা নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বাস্তব প্রমাণই বলতে হবে আদালতের বেঁধে দেয়া সময়সীমা না মানার বিষয়টিকে।
জানা যায়, আদালতের আদেশের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো- সিএমএসডিকে অক্সিজেনের খুচরা ও পাইকারি মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সিএমএসডি নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় এটি তাদের এখতিয়ারের বাইরে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়। প্রশ্ন হল, নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান না হওয়ার পরও সিএমএসডিকে দায়িত্ব দেয়ার পেছনে কালক্ষেপণের মতো কোনো বিষয় জড়িত আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদফতর যে আগাগোড়া অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তা করোনাকালীন একাধিক ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে আদালতের আদেশ মোতাবেক অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা ও পাইকারি দাম নির্ধারণ করে দেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের মূল্য ১১০ টাকা; কিন্তু ধাতব সিলিন্ডার, প্রেসার গজ, নেজাল ক্যানোলা, ফেসমাস্ক ও চ্যানেলসহ ইত্যাদির সিকিউরিটি মানি রাখা হয় ২৪ হাজার টাকা। সিলিন্ডার ফেরত দিলে ২৪ হাজার টাকা ফেরত আসবে। হাসপাতালগুলো সাধারণত সিলিন্ডার ফেরত না দিয়ে রিফিল করে নিয়ে আসে। কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়মিতই আদায় করা হয়। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ বিবেচনায় ১১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে ১০ হাজার সিলিন্ডার কেনার সিদ্ধান্ত হয়। আগে স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক ২৫ হাজার টাকা করে সিলিন্ডার কেনা হতো; কিন্তু ওই সভায় ভ্যাট ও আয়করবহনসহ একই প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকায় সিলিন্ডার সরবরাহ করতে সম্মত হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাজার মূল্যায়ন করে আরও অনেক কম মূল্যে যে সিলিন্ডার কেনা যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোভিড-১৯ রোগীদের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে যৌক্তিক মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ ও অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের পেছনের অনিয়ম-দুর্নীতিকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে অবিলম্বে- এটাই প্রত্যাশা।