গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের গ্যাসে আগুন লেগে বুধবার ৩৪ ব্যক্তি দগ্ধ হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১২ শিশু। দগ্ধদের অধিকাংশের শরীরের ৩৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে যাদের শ্বাসনালি পুড়েছে, তাদের সবার অবস্থাই সংকটাপন্ন।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, একটি বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে দোকান থেকে আরেকটি সিলিন্ডার কিনে এনে সংযোগ দেওয়ার সময় এর চাবি খুলে যায়। এ সময় পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারের বের হওয়া গ্যাসে আগুন ধরে যায়। তখন সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারা হলে উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।
দেশে রান্নার কাজে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ব্যবহারে যে ঝুঁকি আছে এবং সেই ঝুঁকি এড়াতে যে ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন, তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডারজনিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মানুষ দগ্ধ হচ্ছে, প্রাণহানিও ঘটছে।
যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তাদের অজ্ঞতা, অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সাবধানতা জরুরি। এর ব্যত্যয় হলে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ড।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কিছু নিয়মকানুন আছে, যা ব্যবহারকারীদের মেনে চলা উচিত। যেমন: আগুন, বিদ্যুৎ ও তাপের যে কোনো রকম উৎস থেকে এলপিজি সিলিন্ডার দূরে রাখতে হয়। দাহ্য, প্রজ্বলিত বা বিস্ফোরক পদার্থ থেকেও সিলিন্ডার নিরাপদ দূরত্বে রাখা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুলার পাশে আগুনের উৎস থেকে কমপক্ষে ২-৩ মিটার দূরত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় সিলিন্ডার স্থাপন করা উচিত। সিলিন্ডারের মুখে কাগজে মোড়ানো সিল আছে কি না, তা দেখে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সিল থাকার অর্থ হলো ভেতরে গ্যাস যথাযথভাবে পরিপূর্ণ আছে। এরপর সিল সরিয়ে প্রেশার রেগুলেটরের ওপর সংযোগ ক্লিপ লাগাতে হবে।
সুইচ অন করে দেখতে হবে ক্লিপের সঙ্গে রেগুলেটর সঠিকভাবে লেগেছে কি না। তবে এসব কাজ অভিজ্ঞ লোক দিয়ে করিয়ে নেওয়াই ভালো। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, রান্নার জায়গা যেন আলো-বাতাসযুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং রান্নাঘরের জানালা খোলা থাকে।
এছাড়া মানসম্মত রাবার টিউব অথবা হোস পাইপ ব্যবহার করা, রাবার টিউব অথবা হোস পাইপে সাবানের ফেনা লাগিয়ে লিকেজ পরীক্ষা করা, দুই বছর পরপর নতুন রাবার টিউব লাগানো উচিত।
গ্যাস সিলিন্ডার যদি অব্যবহৃত থাকে অথবা গ্যাসহীন অবস্থায় থাকে, তাহলে রেগুলেটরের নব বন্ধ করে রাখা উচিত। সিলিন্ডার ভর্তি থাকার সময় সেফটি ক্যাপ ব্যবহার করা, রান্না শেষে চুলা ও রেগুলেটর উভয়ের সুইচ বন্ধ করে রাখা, টিউবে লিকেজ হয়েছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং এক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা দ্রুত পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সিলিন্ডারের গায়ে মেয়াদ দেওয়া আছে কি না, সেটাও যাচাই করে নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করা উচিত নয় কোনোভাবেই। সবার সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা রোধ করতে।