কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অভিযোগ করেছে, তিন দিনে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ১৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্যাব বলছে, ‘আমদানিকারকরা বৈধভাবে আমদানি করেন, কিন্তু তাঁরা যখন আমদানি পণ্যটি আড়তে পাঠান, তখন কোনো কাগজপত্র দেন না। আর কোন আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট আমদানিকারক থেকে কত দামে কিনলেন, কত টন পণ্য নিলেন তার কাগজ চান না অথবা নেন না। এখানে আমদানিকারক ও আড়তদার খেলাটা খেলেন।
ফলে মুখে মুখে কিংবা ফোনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াতে পারেন তাঁরা।’ এভাবেই পেঁয়াজের আড়তদার ও আমদানিকারকরা যোগসাজশ করে গত তিন দিনে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৮০ কোটি টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মনে করে, বাজারে সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয়। প্রতিবছর মৌসুমের শেষ সময়টাতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে।
আর সেই অজুহাতে দেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফা লুটতে উঠেপড়ে লাগেন। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে গেল। অথচ বাজারে প্রচুর পরিমাণে ছিল আগে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ।আমদানিপ্রক্রিয়ায়ও রয়েছে বেশ কিছু পেঁয়াজ। পুরো ডিসেম্বর মাসে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়। বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। জানুয়ারিতে ক্ষেতের পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে চলে আসার কথা। মোটকথা, বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই বা ছিল না। ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কাও ছিল না।এমন একটি অবস্থায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা অন্যায্য মুনাফা করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনার বাস্তবতা হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের অধিকার সুরক্ষিত নয়। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়ান।কারসাজির বিরুদ্ধে সরকারের শাস্তির হুমকি কিংবা ক্রেতাদের দুর্গতি আমলে নেন না তাঁরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেল—এই পাঁচ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, কিন্তু বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বাজারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সরকারকে অজনপ্রিয় করতে একটি মহল সক্রিয়। ব্যবসায়ীদের একটি জোট বা সিন্ডিকেটের কথা সব সময় শোনা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এই সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট বোধ হয় এবার স্পষ্ট হয়েছে।বিশেষ করে সাম্প্রতিক পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় সিন্ডিকেটের পরিচয় স্পষ্ট হওয়ার কথা। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কঠোর শাস্তি দিতে না পারলে এই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না।