বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর অন্যতম দেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়া। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের সহজলভ্য হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে। ক্রমেই অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে।
এ ধরনের অপরাধের মধ্যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড সংগঠিত, সংঘটিত করাসহ বহু রকম অপরাধই রয়েছে। দিন দিনই বাড়ছে এসব অপরাধের পরিধি। অথচ এসব নিয়ন্ত্রণে বাস্তব উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ ধরনের অপরাধ দমনে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
উন্নয়ন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর সাসটেইনেবল গ্রোথ অ্যান্ড পলিসি অ্যাকশন ফাউন্ডেশন (এএসজিপি) একটি গবেষণা জরিপের তথ্য নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বহু নারী প্রতিদিন সাইবার বুলিং বা অনলাইন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিকার পাননি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও রাজশাহী—এই চার জেলার ১৫-২০ বছর বয়সী ৫০০ নারীর ওপর পরিচালিত ‘অ্যাপ্রেইজিং কমিউনিটি স্ট্রাগল অন সাইবার প্ল্যাটফর্মস’ শীর্ষক ওই গবেষণা জরিপের ফল বলছে, এই চার জেলার প্রায় ৮১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীই কোনো না কোনো ধরনের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলেও সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো রকমের সহযোগিতা পাননি। ৩২ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে সাইবার হয়রানি সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না।
দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনে সরকার উল্লেখযোগ্য উদ্যোগও নিয়েছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে গঠন করা হয়েছে সাইবার ইউনিট। তার পরও সাইবার অপরাধ বাড়ছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার হয়রানি প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রযুক্তির আরো উন্নতি করা প্রয়োজন। আবার সাইবার হয়রানি প্রতিরোধে প্রযুক্তি উন্নতি করা জরুরি বলেও অনেকে মনে করেন। নারীর সাইবার হয়রানি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।