আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক কর্মী বিদেশে পাড়ি জমান। মাঝে কিছুদিন পুরুষের পাশাপাশি বেশ কিছু নারী কর্মীকেও বিদেশে, বিশেষ করে সৌদি আরব যেতে দেখা যায়। সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের মধ্যে চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার দেখা যায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি মাসেই সৌদি আরব থেকে ফেরত আসতে শুরু করেন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা।
অভিযোগ ওঠে যৌন নির্যাতনেরও। দেশে ফিরে নারী কর্মীরা যেসব অভিযোগ করেন, সেগুলো যে একেবারেই মিথ্যা বা ভিত্তিহীন নয়, তা-ও প্রমাণিত হয়েছে অতীতে।
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে আরার শহর থেকে ২৪ বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগকর্তাদের বাসায় কাজে না পাঠিয়ে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন তাঁদের আটকে রেখেছিল বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়। পরিবারের সঙ্গে তাঁদের সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়র অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁদের কোনো চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়নি। এমনকি দূতাবাসের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে নারী কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সৌদি এজেন্সি বাধা দেয়।
সৌদি আরব বাংলাদেশের নারী-পুরুষ কর্মীর জন্য সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার। সেখান থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসে, এটাও সত্য। কিন্তু আরেকটি বড় সত্য হচ্ছে, গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাওয়া নারী কর্মীরা প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ছেন। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না। অনেককে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়। ২০১৯ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারী কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থাপনায় ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু গৃহকর্মী হিসেবে না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ বাড়াতে হবে। বিদেশে থাকাকালে প্রত্যেকের সঙ্গে মোবাইল ফোন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ মিশনগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে।