শিশুরা ভুল করে, অপরাধও করে। অভিজ্ঞতা কম থাকায়, জ্ঞান-বুদ্ধি-বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজেই সঙ্গদোষে তাড়িত হয়। কিন্তু তাদের সামনে রয়েছে এক সম্পূর্ণ জীবন। সেই জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই শৈশব। তাই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অপরাধ করলেও শিশুদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও রয়েছে তেমন সুযোগ। আবার অনেক সময় নানা রকম রেষারেষিরও শিকার হতে হয় শিশুদের। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জে।
গ্রামীণ বিবাদকে কেন্দ্র করে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে শিশুদেরও মামলার আসামি করা হয়। ফলে স্কুল-লেখাপড়া ছেড়ে তাদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। বিজ্ঞ বিচারক শিশুদের সেই ভোগান্তি লাঘবে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী রায় দিয়েছেন। তিনি মোট ৫০টি মামলায় সাজার মুখে থাকা ৭০টি শিশুকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে সংশোধনের জন্য মা-বাবার জিম্মায় দিয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষ এই রায়ের প্রশংসা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই স্বীকার করেন, কারাগারে তো বটেই, এমনকি সংশোধনাগারেও শিশুদের সংশোধন হওয়ার মতো পরিবেশ নেই। ফলে উল্টো ফলাফলই হয়। অভিযোগ আছে, সংশোধনের বদলে অনেকেই আরো বড় অপরাধী হয়ে ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু এবং শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন যে রায় দিয়েছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রায়ে বলা হয়েছে, লঘু অপরাধের ৫০ মামলার আসামি ৭০ শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থেকেই নিজেদের সংশোধন করবে। তাদের কার্যক্রম ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা।
তিনি তিন মাস পর পর আদালতকে তদারকির তথ্য জানাবেন। শিশুদের প্রতিদিন দুটি ভালো কাজ করতে হবে এবং তা ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে। বছর শেষে ডায়েরি আদালতে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া মা-বাবাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, তাঁদের সেবা-যত্ন করাসহ বেশ কিছু সদুপদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা, কোনো অপরাধে যুক্ত না হওয়াসহ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থতার সঙ্গে শিশুরা যাতে গড়ে উঠতে পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেখানে গ্রামীণ বিবাদের মামলায় মাসের পর মাস শিশুদের আদালতে হাজিরা দিতে হবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে এটাও কাম্য নয় যে এমন লঘু অপরাধে তাদের কারাগার বা সংশোধনাগারে যেতে হবে। আমরা আশা করি, পরিবারগুলো আদালতের দেওয়া শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করবে এবং এই শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।