ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বর্ষাকালেই বেশি হয়। কিন্তু এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি এসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ পর্যায়ে রয়ে গেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ৬৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৯৩।
অথচ গত বছর একই দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ২০৭ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৯৩৫ জন। সেই হিসাবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে মারা গেছে চারজন। এ নিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা দুই প্রজাতির—এডিস ইজিপ্টি ও এডিস আলবোপিকটাস। ইজিপ্টিকে নগরের মশাও বলা হয়। এটিই ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি যেখানে-সেখানে জমে থাকে এবং খুব সামান্য পানিতেই এই মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায় মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে।
সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশ বিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেক বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখা হয় এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। আর দুই বাড়ির মধ্যখানে সরু জায়গায় রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। অনেক বাড়ির সানসেটেও আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশ বিস্তার দ্রুততর হয়। ফলে বর্ষায় দ্রুত এডিস মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
এ বছরের শুরুতেই বৃষ্টির ধরন এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে কীটতত্ত্ববিদরা সাবধান করেছিলেন যে মশা নিধনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলোতে যে ধরনের ক্রাশ প্রগ্রাম চালানো প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও পৃথিবীব্যাপী মশাবাহিত রোগব্যাধি দ্রুত বাড়ছে। তাই যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হবে। আমরা আশা করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মশা নিধনে দ্রুত ক্রাশ প্রগ্রাম চালানো হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোরও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।