১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ১০ দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এগুলো খুব কম মাত্রার ভূকম্পন হলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এগুলো বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। তাই সিলেটজুড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক এসব ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় থাকা ডাউকি ফল্ট। ১৮৯৭ সালে এই ফল্টের পূর্ব প্রান্তে ৮.৭ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, যা ঢাকায়ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছিল।
এই ফল্টেরই পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থান। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সোয়া শ বছরে এই ফল্টে বড় ভূমিকম্প হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, সিলেট নগরীর নিচে নতুন কোনো ফল্ট লাইনও তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণে সিলেটকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। ২৯ ও ৩০ মে আট দফা ভূকম্পনের সময় দুটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়েছিল। গত মঙ্গলবারের দুই দফা ভূকম্পনে ঐতিহ্যবাহী রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একে আটকানোর সাধ্য বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে পারেনি। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাসও দেওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে হলে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ঘরবাড়ি বা স্থাপনা ভূমিকম্প-প্রতিরোধী করে বানাতে হবে। যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এসব থেকে অনেক দূরে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে নগরী। বাড়িঘর তৈরিতে কোনো নিয়মনীতি মানা হয় না। ডোবানালা ভরাট করে কিংবা প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়াই তৈরি হয় বহুতল ভবন।
ভূমিকম্প ছাড়াই এমন অনেক ভবন হেলে বা ধসে পড়ে। একে তো বড় বিপর্যয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো যথেষ্ট যন্ত্রপাতি নেই, তার ওপর এমন সব গলি-ঘুপচিতে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে যেখানে উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি পৌঁছানো যাবে না। আছে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং মাথার ওপর বিদ্যুতের জঞ্জাল। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বড় কোনো শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবনধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে। জানা যায়, ২০১৯ সালে এক জরিপের মাধ্যমে সিলেটের ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি ভবন ভেঙে ফেলা হলেও বাকি ২১টি এখনো বিদ্যমান।
শুধু সিলেট নয়, রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগর চট্টগ্রামসহ অনেক বড় শহরই রয়েছে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জাতীয়ভাবে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। বড় শহরগুলোর সব ভবন ভূমিকম্প-প্রতিরোধী করে গড়ে তুলতে হবে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। সিলেটের মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে।