তক্ষক গিরগিটির একটি প্রজাতি, ইংরেজি নাম গেকো। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছাদের ফাঁকফোকরে আর পুরোনো গাছের কোটরে এরা থাকে। নামের সঙ্গে অনেকে পরিচিত হলেও পতঙ্গভুক এই প্রাণীকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য খুব কম লোকেরই হয়েছে। অথচ কমবেশি সারা দেশেই প্রাণীটি পাওয়া যায়। তারপরও যে এদের দেখা যায় না, তার কারণ লাজুক স্বভাব। সহজে এরা মানুষের সামনে আসে না। তার ওপর প্রাণীটি আবার নিশাচর। তবে দর্শন না পেলেও তক্ষকের আওয়াজ কিন্তু শোনা যায় নিয়মিত। ‘কককক’ দিয়ে শুরু হয় এই আওয়াজ, এরপর স্পষ্ট করে ‘টক্কে টক্কে’ করে ডেকে ওঠে কয়েকবার।
অদ্ভুত আওয়াজ আর অন্তরাল স্বভাবের কারণে প্রাণীটি নিয়ে অনেক ধরনের গল্পগাছা ও কুসংস্কার আছে। অনেকেরই ধারণা, তক্ষক আসলে সাপ, এর বিষ প্রাণঘাতী। এ কারণে প্রাণীটিকে দেখলেই সাপের মতোই পিটিয়ে মেরে ফেলতে দেখা যায়।আয়ুর্বেদিক প্রয়োজনে আবহমানকাল থেকেই প্রাণীটি শিকার হয়ে আসছে। ইদানীং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা। হাঁপানি, ক্যানসার ও এইডসের ওষুধপথ্য তৈরিতে লাগে প্রাণীটির দেহাংশ। এইচআইভি প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে তক্ষকের দেহাংশ। মাদক তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে তক্ষক। যদিও এগুলোর প্রকৃত ফলপ্রসূতা নিয়ে সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। এসব কারণে তক্ষকের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন খবরদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইদানীং তাই তক্ষক শিকার অনেক বেড়েছে। অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাচালান চক্র। গণমাধ্যম এর খবর, ২৭ এপ্রিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে তক্ষকসহ ধরা পড়েছেন দুই পাচারকারী। প্রায়ই এ ধরনের খবর এখন আসছে।
এ মুহূর্তে দেশে ঠিক কত তক্ষক আছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই। এ-সংক্রান্ত কোনো জরিপও নেই। তাই প্রাণীটির অবস্থা সংকটাপন্ন কি না, নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে পাচারের যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, এখনই থামানো না গেলে অচিরেই যে তা বিপন্নের তালিকায় নাম ওঠাবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
পশ্চিমবঙ্গে অন্তত তা-ই হয়েছে। এমন না যে এ বিষয়ে দেশে আইন নেই। তক্ষক ধরা, মারা দুই-ই দণ্ডনীয় অপরাধ। বাঘ, হাতির মতো বড় প্রাণীর ক্ষেত্রে যতটা সোৎসাহে আইনটা প্রয়োগ করা হয়, ছোট প্রাণীর বেলায় তার বিন্দুমাত্রও দেখা যায় না। এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তক্ষক ও প্যাঁচার মতো ছোট প্রাণীর পাচারকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।