বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করে আর্থিক খাতের বিশ্ব সংস্থা বিশ্বব্যাংক তাদের ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস সাউথ এশিয়া ভ্যাকসিনেট’ শীর্ষক দ্বিবার্ষিক আঞ্চলিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলছে, ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনে ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে, আগের পূর্বাভাসে যা ২ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। অন্যদিকে মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সর্বশেষ আউটলুকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের পূর্বাভাস হচ্ছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৭ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে এই আশাবাদ শোনাচ্ছে, তখন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থা তাদের ‘কিভাবে মহামারিকে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক খানা জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০.৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাড়ে ৭৮ শতাংশ পরিবার এখনো করোনার প্রথম আঘাতের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি।
শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই নয়, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ পেয়ে দেশের ছোট ও মাঝারি বা এসএমই খাতের অবস্থার উন্নতি হলেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে পুরোপুরি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অন্যদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, টাকার হিসাবে যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত ও সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার। আসন্ন রোজার ঈদের আগে এক কোটি ৯ হাজার ৯৪৯ পরিবারকে ১০ কেজি চালের দামের সমান আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। কিন্তু এটা তো সাময়িক একটি ব্যবস্থা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে ঋণের ফাঁদে পড়ে না যায় এ জন্য তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, বাজেটেও সেই পরিকল্পনা থাকা উচিত।