করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। উৎপাদনব্যবস্থার পাশাপাশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কর্মসংস্থান। সংকুচিত হয়েছে পুরনো অনেক প্রতিষ্ঠান। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই দফায় ১ জুলাই থেকে ১৪ দিনের জন্য ২১ দফা কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্যকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বের না হলে দিনের খাবার জুটবে না অনেকের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সকালে শ্রমিকের হাট বসে। নানা কাজে অভিজ্ঞ শ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করতে এসব বাজারে এসে অপেক্ষা করেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে সেসব বাজারেও মন্দা দেখা দিয়েছে। কাজের সন্ধানে এসে লোক বসে থাকলেও কাজ জুটছে না।
করোনাকালে বেকার হয়েছেন অনেকে। নতুন করে কাজে যোগ দিলেও অনেকের আয় কমেছে। ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ১০ হাজার ৬৪টি খানার ওপর পরিচালিত এক জরিপ-গবেষণার ফল বলছে, করোনাকালীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ। দিনমজুরদের আয় কমেছে ৬৬ শতাংশ। নারীদের আয় কমেছে ৬৮ শতাংশ। পুরুষদের আয় কমেছে ৬৭ শতাংশ। পরিবহন শ্রমিকদের আয় কমেছে ৭৭ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুটি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের যৌথ জরিপের ফল বলছে, কভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।
তারা বলছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪.৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১.২৪ শতাংশ। আরেকটি জরিপ গবেষণার ফল বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের ৭৭ শতাংশ পরিবারে গড় মাসিক আয় কমেছে, আর ৩১ শতাংশ পরিবারে ঋণ বেড়েছে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩৪ শতাংশ পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি বা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। কষ্টে আছে এসব মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট তাদের, যাদের নির্ভর করতে হয় প্রতিদিনের উপার্জনের ওপর।
গত বছরের মার্চে লকডাউন শুরুর পর সংকটে পড়া মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতে নানা সংগঠনের কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে তৎপরতা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দেখা গিয়েছিল। সরকারি তৎপরতাও ছিল বেশ। গতবার বড় রাস্তার ধারে, ফুটপাতে বসে থেকেও সহায়তা পেয়েছিল নিরন্ন মানুষ। কিন্তু এবার সহায়তা তেমন মিলছে না। রাজধানী ঢাকায় শুধু নয়, ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা।
এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধে শামিল হতে হবে সবাইকে।