তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে উঠতে গিয়ে ঢাকা আজ দূষণের নগরী। করোনাকালেও থেমে নেই বায়ুদূষণ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণের যে সমীক্ষা চালিয়েছে তার ফল বলছে, গত এক বছরে রাজধানী ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০.২ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বস্তুকণা ২.৫ গড় মান পাওয়া যায় প্রতি ঘনমিটারে ৩০৪.৩২ মাইক্রোগ্রাম।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আরেক বায়ু পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বলছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গড় দূষণ মাত্রায়ও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। আর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। বায়ুদূষণ যে মহামারি পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তুলতে পারে, সে চিত্রও এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা পিএম ২.৫-এর পরিমাণ এক মাইক্রোগ্রাম বাড়লেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার ৮ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। দূষণ বেড়ে গেলে বাতাসে করোনাভাইরাসের আয়ুও অনেকটা বাড়তে পারে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেড়ে যাবে।
নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে চলছে সড়ক খনন। নগরীর অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ির সময় কোনো ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। উন্মুক্ত স্থানে বালু, মাটি, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণপণ্য খোলা রাস্তায় ফেলে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ। রাজধানীতে নেওয়া মেগাপ্রকল্পগুলোর আওতায় সড়কে কাটাকাটি চলছেই। ফলে দূষণ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ঢাকায় ধুলার দূষণে সৃষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াইকে কঠিন করে তুলতে পারে। তাঁদের মতে, ঢাকায় বায়ুদূষণ যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে, তাতে মানুষের করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা কমে যাবে।
কভিড সেরে যাওয়ার পর যারা বাইরে যাবে, বায়ুদূষণ তাদের ফুসফুসে অনেক বেশি ক্ষতি করবে। যাদের ফুসফুস কভিডে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা কভিড থেকে সেরে ওঠার পর দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে গেলে সর্দি, কাশি আরো বেড়ে যায়। ফুসফুসে সংক্রমণ বেড়ে গেলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
কভিড পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।