কোনোভাবেই সমস্যামুক্ত হতে পারছে না দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা। সমন্বয়হীনতার চূড়ান্ত আলামত দেখা যাচ্ছে সেখানে। সমন্বয় না থাকলে চিকিৎসাব্যবস্থা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি চিকিৎসক তৈরি করার পরও দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না।
গণমাধ্যমে আমরা সব সময় প্রায় একই ধরনের খবর দেখতে পাই।
অনেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি একটি বড় সমস্যা। অনেক হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। আবার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে—এমন অনেক হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান। অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি গেলেও তা স্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে অনেক টেকনিশিয়ান বাইরে কাজ করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। যেমন কিছুদিন আগে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হাসপাতালে দুটি এক্স-রে মেশিন রয়েছে। কিন্তু টেকনিশিয়ান না থাকায় তা কোনো কাজেই আসছে না। ২০০৪ সালে টেকনিশিয়ান অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এরপর প্রায় ১৮ বছর ধরে এক্স-রে কক্ষে তালা ঝুলছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের বার্ন ইউনিট পড়ে আছে। ব্যবহৃত হচ্ছে না। তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে তা ২০২০ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই বছর পার হতে চললেও প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এই প্রকল্প চালু করা হয়নি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। সেখানে পদসৃজন, পদায়ন ও জনবল এবং চিকিৎসাসরঞ্জাম প্রয়োজন। কনসালট্যান্ট, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জন, অন্তত চারজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, অবেদনবিদ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত বছর রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলো নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এই বিভাগে লোকবল নেই। অকেজো সব মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও হয় না অস্ত্রোপচার।
এ ধরনের খবর দেশের গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু কোনো ফল লাভ হচ্ছে কি? কেন অবহেলিত থাকছে দেশের স্বাস্থ্য খাত? বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।