আমাদের বাজারের চরিত্র অনেকটা স্বেচ্ছাচারী ধরনের। এখানে নৈতিকতা, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি কিছুই ঠিকমতো কাজ করে না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন যাঁরা সুযোগ পেলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। কখনো চালের দাম, কখনো আদা-রসুনের দাম, কখনো ডিম-মুরগির দাম আবার কখনো বা কাঁচা মরিচের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
এভাবে মূল্যবৃদ্ধির জন্য তাঁদের অজুহাতের কোনো অভাব হয় না। অজুহাতের তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া ইত্যাদি। এসব অজুহাত যখন ছিল না, তখনো দাম বেড়েছে। তখনো একেক সময় একেক কথা বলা হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে হরতাল-অবরোধ, কখনো বৃষ্টি-বন্যা, কখনো আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, কখনো সরবরাহ কম ইত্যাদি।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে যে আদার কেজি ছিল ১২০ টাকা, বৃহস্পতিবার বাজারভেদে সেই আদা বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে বেড়ে গেছে আমদানি করা রসুনের দামও। এক ডজন ডিমের দামও ছিল ১৪৫ টাকা।
ব্যবসায়ীদের এসব অজুহাত যে অর্থহীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এক ডজন ডিমের দাম হঠাৎ করেই ১৬০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সে সময় হিসাব করে দেখা যায়, পরিবহন খরচ যতটা বেড়েছে তাতে এক ডজন ডিম পরিবহনে খরচ বাড়ে ৫০ পয়সারও কম, অথচ দাম বেড়ে গিয়েছিল ৫০ টাকারও বেশি।
আবার ডিম আমদানি শুরুর হুমকি দেওয়ার পর তা কমেও গিয়েছিল। আমদানির উদ্যোগ বন্ধ হওয়ায় আবার ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় আদা আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু তাতে এক কেজি আদার আমদানি খরচ কতটা বেড়েছে, সে হিসাব কেউ দেন না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই হিসাবগুলো নিয়মিতভাবে ভোক্তাদের জানাতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা করছে না কেন?
এর আগে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেই ঘোষণার ২৩ দিন পর মাত্র দুটি পণ্যের তথা পাম অয়েল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
তাতে খোলা চিনির দাম কমেছে কেজিপ্রতি ছয় টাকা এবং পাম অয়েলের দাম কমেছে লিটারপ্রতি ১২ টাকা। আমরা কমানো দামটিকে যদি বর্তমান বাজারে যৌক্তিক ধরি, তাহলে ব্যবসায়ীরা সেই পরিমাণ অর্থ বেশি নিচ্ছিলেন।
এভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যে ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বেশি নিচ্ছেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থায়। কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে কমিশন ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। বাজারে পণ্যমূল্য যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।