কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বাইরে যেসব শিক্ষার্থী আছে, তাদের কী হবে। সপ্তাহে এক দিন ক্লাস করে তিন মাসের মধ্যে কীভাবে পরীক্ষা দেবে? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হবে। প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষাও হবে। তাঁর কথায় মনে হতে পারে, পরীক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে।
শিক্ষার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়েছে। না হলে দু–তিন মাস সপ্তাহে এক দিন ক্লাস করে কীভাবে বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক সম্পর্কে এখনো কিছু বলা হয়নি; বিশেষ করে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র সমাপনী পরীক্ষা। এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তায় আছে। কোনো কোনো শিক্ষাবিদ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে মার্চে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি করার সুযোগ পাবে। পরের শিক্ষাবর্ষও ৯ মাসে শেষ হবে।
তবে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসির পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। শিক্ষাবিদদের মতে, এসব পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা লাভবান হচ্ছে না। লাভবান হচ্ছে কোচিং ও নোট বইয়ের ব্যবসা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পুরো শিক্ষাটিই এখন কোচিং ও নোট বই নির্ভর হয়ে পড়ছে। করোনার কারণে গত বছর বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকল্প হিসেবে যে অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা–ও ফলপ্রসূ হয়নি। এ জন্য একশ্রেণির শিক্ষক ও অভিভাবকও দায়ী।
আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় অষ্টম শ্রেণি কোনো আলাদা স্তর নয়। আলাদা স্তর হলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। সে ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার কতটা প্রয়োজন আছে, তা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। কোমলমতি শিশুদের ওপর পরীক্ষার বোঝা যত কম চাপানো হবে, ততই মঙ্গল।
করোনা যেসব খাতকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেগুলোর মধ্যে শিক্ষা শীর্ষে। এখন পরীক্ষার চেয়েও সরকারের নজর দিতে হবে, কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা যায়। নিয়মরক্ষার পরীক্ষা শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখবে না। অতএব, পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ ক্লাস নিশ্চিত করতে হবে।