মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়ে গেছে। এর প্রভাব বেশি পড়ছে গরিব মানুষের ওপর। তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য কিনতে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হযেছে, ‘সস্তা মাংস’ বলে পরিচিত ব্রয়লার মুরগির দাম রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
মাত্র তিন সপ্তাহেই কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। প্রায় একই হারে বাড়ছে সোনালি মুরগির দামও। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, দেশে এক বছরে পাম তেলের চাহিদা আছে ১৩ লাখ টন। সাড়ে ১০ লাখ টন পাম তেল দেশে পৌঁছেছে। এর বাইরে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর—এই তিন মাসের ঋণপত্র খোলা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার টনের।
আগামী চার মাসে চাহিদার বেশি পাম তেল আমদানি হবে নিশ্চিত, কিন্তু বাজারে এর প্রভাব বোধ হয় পড়বে না। একটি খবরে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দামে ধস নেমেছে।
এই সুযোগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেক কম দামে গম কিনছেন, কিন্তু এর সুফল দেশের বাজারে পাওয়া যায়নি। ওদিকে বেশির ভাগ মসলার দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে আদা ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
ওদিকে রমজান আসছে। প্রতিবছর রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়। রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়। দাম বাড়ানোর যত রকম কারসাজি আছে, তা এ মাসে করা হয়।
এবারও তেমনটি ঘটতে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন পড়ে না। একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে—এমন কথাও চালু আছে।
বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শুরু থেকে লাগাম টানতে না পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
একই সঙ্গে টিসিবির আওতা বাড়াতে হবে। মানুষের কাছে ন্যায্য মূল্যের পণ্য পৌঁছে দিলে কিছুুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।