দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে কয়েক বছর ধরে বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল দুই নম্বরে, এক নম্বরে ছিল দিল্লি। এবার দিল্লিকে টপকে ঢাকা উঠে এসেছে এক নম্বরে। বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগব্যাধি এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যানও নিশ্চয়ই এই পর্যায়ক্রম অনুসরণ করবে। কিন্তু তা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারক ও কর্তাব্যক্তিদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার ঢাকার মহাখালীতে থাকা আইসিডিডিআরবি স্টেশনে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ছিল ৪৫১, ইটভাটা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হেমায়েতপুরে ছিল ৩৯৮ এবং বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস স্টেশনে ছিল ৩৬৩, যা খুবই বিপজ্জনক বলে গণ্য করা হয়।
তিন দিন ধরেই ঢাকার অবস্থান একই রকম। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের উহানে একিউআই ছিল ২৪০, তৃতীয় অবস্থানে থাকা কুয়েত সিটিতে ছিল ১৮৪। এ ছাড়া ভারতের দিল্লিতে ছিল ১৮১ এবং পাকিস্তানের লাহোরে ছিল ১৮০। এই বায়ুমান অনুযায়ী সহজেই অনুমেয় যে ঢাকার মানুষ কিভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে!
বিশ্বে শুধু বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর ৭০ লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই মৃত্যুর সংখ্যা লক্ষাধিক। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দূষণজনিত মৃত্যুর পরিমাণ ২০১৫ সালের পর থেকে বেড়েছে ৭ শতাংশ এবং ২০০০ সালের পর থেকে বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ার বিভিন্ন দেশ ও শহরের বায়ুমান বা একিউআই নির্ণয়ে নিয়মিতভাবে কাজ করছে।
একিউআই ১৫০-এর ওপরে ওঠাকেই ক্ষতিকর মনে করা হয়, বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে এমন লোকজনের জন্য। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসের। কারণ দূষিত বায়ুর সঙ্গে থাকা অতি ক্ষুদ্র ক্ষতিকর বস্তুকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি ফুসফুসে ঢুকে যায়। এরপর রক্তের সঙ্গে সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। এক দশক আগে পরিচালিত ফুসফুসের সক্রিয়তা বা পিএফটি (পালমোনারি ফাংশন টেস্ট) পরীক্ষাভিত্তিক এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকার ২৩.৪৭ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। সেই সংখ্যা এখন নিশ্চয়ই অনেক বেড়েছে।
আমরা মনে করি, বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কলকারখানা, ইটভাটা, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনসহ অত্যধিক দূষণের কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থাকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।