ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ২১ শতাংশই ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ তথা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত। একই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের গবেষণায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এর জন্য দায়ী করছেন ধূমপান, পরিবেশদূষণ, ফুসফুসে ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণ, অপুষ্টিসহ আরো কিছু কারণকে।
এই সমস্যা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিতে থাকলেও এ ক্ষেত্রে মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলা যেমন ব্যাপক, তেমনি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার উদ্যোগও সীমিত।
বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের গবেষণায় উঠে এসেছে, চল্লিশোর্ধ্ব সিওপিডি রোগীদের ৬২ শতাংশই ধূমপায়ী। ধূমপানের যেমন প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে, তেমনি পরোক্ষ প্রভাব আছে। ধূমপায়ীদের আশপাশে যারা থাকে তারা ধূমপান না করেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। সিগারেট, বিড়ি, পাইপ, চুরুট বা হুক্কা—যে প্রকারেই ধূমপান করা হোক না কেন, তার সবই ক্ষতিকর। এই তথ্যটি ব্যাপকভাবে প্রচারিতও হচ্ছে। কিন্তু তাতে ধূমপান কমেছে কি? সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর। আর রাজধানী ঢাকা কখনো দুই নম্বরে, কখনো তিন নম্বরে থাকে। দূষিত বায়ুতে থাকা অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে গিয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কয়েক বছর আগে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ঢাকার ১১টি এলাকায় পাঁচ শতাধিক মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে ফুসফুসের অসুস্থতা ব্যাপক হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। ফুসফুসের সক্রিয়তা বা পিএফটি (পালমোনারি ফাংশন টেস্ট) পরীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার ২৩.৪৭ শতাংশ মানুষ ফুসফুসের কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। এত দিনে এই হার নিশ্চয়ই আরো বেড়েছে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের (ভারপ্রাপ্ত) তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ রোগী তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। বেশির ভাগই অ্যাজমা ও সিওপিডিতে আক্রান্ত। তিনি জানান, অক্সিজেন কমে যাওয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, রেসপিরেটরি ফেইলিওর হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া—নানাবিধ সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসে। কিন্তু সারা দেশের কত শতাংশ রোগীর ঢাকায় এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সাধ্য আছে? প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু রোগীকে শ্বাসকষ্টে ধুকতে ধুকতেই মারা যেতে হয়। শীতের সময় গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যাটি আরো প্রকট রূপ নেয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসতন্ত্রের রোগে বেশি ভুগতে দেখা যায়।
জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সারা দেশে সিওপিডিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগ চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ধূমপান নিরোধে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জনসমক্ষে ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশদূষণ কমাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে সারা দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা সহজলভ্য করতে হবে এবং সবাইকে টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।