মাগুরায় নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি দেশের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে গত বৃহস্পতিবার চলে গেছে না-ফেরার দেশে। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরার নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার লাশ বাড়ির কাছে শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডি গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ষণের যেসব সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকেই উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত করছে।
ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মাগুরায় আট বছরের নিষ্পাপ শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় পুরো জাতি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। তার মৃত্যুতে সবাই শোকাভিভূত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধের চরম অধঃপতনের চিত্রই যেন ফুটে ওঠে।আমাদের সমাজের পরিচয়টি যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।দেশজুড়ে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুরো দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।কিছু ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনাটি তেমনই একটি ঘটনা। আলোড়ন থাকতে থাকতেই এই ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সাত দিনের মধ্যে মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু হবে।উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় বলেছেন, এ ধরনের অপরাধের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।যখন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে, সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসনে যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের দুর্বলতা বড় হয়ে দেখা দেয়; তখনই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।