আমাদের উন্নয়নকাজের মান এবং স্থায়িত্ব নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ওঠে। আবারও সেই প্রশ্ন উঠেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় নির্মিত একটি স্পার বাঁধ (গ্রোয়েন) নিয়ে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্পার বাঁধটি সাত বছরও অটুট থাকেনি। তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চর বজরা এলাকায় স্থাপিত বাঁধটির সামনের প্রায় ১৫ মিটার অংশ ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর বাঁ তীর রক্ষায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্পার বাঁধ (গ্রোয়েন) নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এলাকার মানুষ তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। পাশাপাশি বাঁধটি ধীরে ধীরে ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিনোদনকেন্দ্রেও পরিণত হয়। প্রতিদিন, বিশেষ করে শেষ বিকেলে এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে এখানে বিনোদনপ্রেমী মানুষ ভিড় করে। স্পার ধসের খবরে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।স্থানীয় লোকজনের মতে, বাঁধটি রক্ষা করা না গেলে এলাকার চর বজরা উচ্চ বিদ্যালয়, চর বজরা জামে মসজিদ, বজরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ কাশিম বাজার, চর বজরা, পূর্ব বজরা, লকিয়ারপাড় ও পশ্চিম বজরা এলাকা নদীভাঙনের প্রবল ঝুঁকিতে পড়বে। বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, বসতভিটা ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ধসে যাওয়ার খবর পেয়েছেন। স্থানটি পরিদর্শনও করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করা হবে।উজান থেকে আসা পলিমাটির কারণে তিস্তা প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে, বিশেষ করে উজানের সব কটি বাঁধ খুলে দেওয়া হলে তিস্তা এক প্রলয়ংকরী রূপ নেয়। সেখান থেকে তিস্তাপারের বাসিন্দাদের রক্ষায় নির্মিত গ্রোয়েনের এই হাল কোনোমতেই কাম্য নয়। এটি দ্রুত ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি খননের মাধ্যমে তিস্তাকে নাব্য করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে প্রতি বর্ষায় তিস্তাপারের মানুষকে চরম দুর্দশায় পড়তে না হয়।