এতে খরচ ও সময় দুটিই বেশি লাগছে। একসময় যমুনা দিয়ে বড় বড় জাহাজ উত্তরাঞ্চলে চলাচল করত। চিলমারী বন্দরের স্তবগান এখনো উত্তরের মানুষের মুখে মুখে। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ আরো অনেক নদ-নদীর সুবাদে উত্তরের জীবনযাত্রা ছিল সমৃদ্ধ।
কিন্তু আজ জাহাজ তো দূরের কথা, শুষ্ক মৌসুমে একটু বড় নৌকার চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়েছে এলাকার কৃষি ও প্রকৃতিতে। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উত্তরাঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। নদীপথের এমন দুর্দশার বড় কারণ ক্রমাগত পলি জমে নদী ভরাট হওয়া এবং নদী খননে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকা। জানা যায়, ব্রিটিশ আমলেও ভারতবর্ষে কয়েক শ ড্রেজারের একটি বড় বহর ছিল।দেশ বিভাগের পর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে কোনো ড্রেজার ছিল না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার পাঁচটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিল। সেগুলো দিয়ে মূলত ঘাটগুলো সচল রাখা হতো। এরপর আর কোনো ড্রেজার আসেনি। ১৯৯৬ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড্রেজার সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়।এ পর্যন্ত তিন ডজনের মতো ড্রেজার সংগৃহীত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের নৌপথগুলোকে ন্যূনতম নাব্যতা রাখার জন্য প্রয়োজন শতাধিক ড্রেজারের। তা না হলে যে পরিমাণ খনন করা হবে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পলি এসে নদীতে জমা হবে এবং নদী ভরাট পরিস্থিতি খারাপই হতে থাকবে।নদীগুলোকে নাব্য রাখার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বড় চারটি নদীতে (ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা) ক্যাপিটাল ড্রেজিং চলছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে খননকাজ শেষ হওয়ার কথা। ছোট নদীগুলোও খনন করা হচ্ছে, কিন্তু খননের এই গতি বাড়াতে হবে।উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পদ্মা, যমুনাসহ প্রধান নদীগুলোকে নাব্য করতেই হবে। নৌপথগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমরা আশা করি, উত্তরাঞ্চলীয় নৌপথের প্রবেশমুখ দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌ চ্যানেলকে দ্রুত খননের মাধ্যমে জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা হবে। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্য নৌপথগুলোতে খননকাজ অব্যাহত রাখতে হবে।