সারা দেশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে শত শত ইটখোলা রয়েছে। এগুলোতে প্রধানত বনের কাঠ পোড়ানো হয়। বনের পাশে গড়ে উঠেছে প্রচুর করাতকল। এগুলোরও লক্ষ্য বনের কাঠ।
সাম্প্রতিক সময়ে কাঠকয়লার ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। তাই বনের পাশেই গড়ে উঠেছে কাঠ পোড়ানোর অসংখ্য চুল্লি। এসব চুল্লিতে পুড়ে নিঃশেষ হচ্ছে বনের গাছপালা। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম-পাটুলি ইউনিয়নের আছিম টানপাড়া গ্রামে অবাধে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ছয় হাজার ৪৭৫ একর। এনায়েতপুর বন বিটে পাঁঁচটি মৌজায় আছে দুই হাজার ৮৩৬ একর এবং সন্তোষপুর বন বিটে তিনটি মৌজায় আছে তিন হাজার ৬৩৯ একর বনভূমি। আছিম টানপাড়া গ্রামটি এনায়েতপুর বন বিটের পাশে। যেখানে চুল্লি গড়ে তোলা হয়েছে, তার পাশেই রয়েছে ঘন বন। খবরের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতেও দেখা যায়, চুল্লির পেছনে ঘন বন। আর চুল্লির সামনে থরে থরে সাজানো রয়েছে চেড়াই করা কাঠ। কয়েকজন শ্রমিক কাঠ পোড়ানোর কাজ করছে। উথুরা রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এভাবে বনের পাশে চুল্লি তৈরি করে কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ অবৈধ। স্থানটি তাঁর রেঞ্জের আওতায় হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বনের পাশে এই অবৈধ কাজ চলে এলেও তা বনকর্তাদের কারো নজরে আসেনি কেন? শুধু ফুলবাড়িয়ায় নয়, এর আগে প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরেও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও তার আশপাশে ৩৩টি চুল্লিতে এভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। ধারণা করা হয়, ভাওয়াল, মধুপুরসহ এই অঞ্চলটিতে এ রকম আরো বহু চুল্লি রয়েছে।
সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য কোনো দেশের মোট স্থলভূমির কমপক্ষে ২৫ শতাংশে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ আরো অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এভাবে চললে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে আর কোনো বনাঞ্চল থাকবে না। আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানার তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটখোলা, করাতকল বা কাঠ পোড়ানোর চুল্লি থাকতে পারবে না।
কিন্তু সেই আইনের বাস্তবায়ন নেই কেন? বন বিভাগ এসবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? পরিবেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়?
আমরা চাই, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াসহ যেসব স্থানে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে কাঠ পোড়ানোর চুল্লি গড়ে উঠেছে, অবিলম্বে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।