যাঁরা দুস্থ ও কাজকর্ম করতে পারেন না, তাঁদেরই দুস্থ ভাতা পাওয়ার কথা। যাঁরা বিধবা ও অসহায়, তাঁদেরই প্রাপ্য বিধবা ভাতা। আবার যাঁরা প্রকৃত প্রতিবন্ধী, তাঁরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার হকদার। এটাই নিয়ম। কিন্তু প্রায়ই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকে। ফলে যে উদ্দেশ্যে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এসব ভাতা চালু করেছিল, সেই উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ বেশ পুরোনো। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। প্রথম আলোর নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধির প্রতিবেদনে জানা যায়, উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকেন যথাক্রমে ২৩৪৮, ৫৬১ ও ৯০৮ জন। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী না হয়েও অনেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে ভাতা নিচ্ছেন। সধবা হয়েও পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে। একটি উপজেলায় ৯০৮ জন দুস্থ প্রতিবন্ধী থাকাটা অস্বাভাবিক।
একসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুস্থ, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের তালিকা করতেন। পরবর্তীকালে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি উঠলে সমাজসেবা বিভাগকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলায় সমাজসেবা দপ্তর আছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে তাদের কর্মীও আছেন, যঁাদের মাধ্যমে তারা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। ফলে সমাজসেবা বিভাগের তালিকায় যদি দুস্থ ব্যক্তির স্থলে সচ্ছল কিংবা প্রতিবন্ধীদের স্থলে সুস্থ মানুষ ঢুকে যায়, তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিতেই হবে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো অনিয়ম হলে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু অনিয়মটি কীভাবে হলো, কারা করলেন, সেই প্রশ্নেরও জবাব তাঁকে দিতে হবে।
আর সমস্যাটি কেবল একটি উপজেলায় নয়, দেশের সব উপজেলার সামাজিক সুরক্ষা তালিকায় বিস্তর অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে সমাজসেবা দপ্তরের কর্মী ও কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে সচ্ছল মানুষকেও দুস্থ বানিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররাও পুরোপুরি দায় এড়াতে পারেন না। সমাজসেবা বিভাগ তালিকা করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছাড়পত্র নিতে হয়।
নান্দাইলে দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের তালিকা নিয়ে যে নয়ছয় হয়েছে, তার অবসান হোক। তালিকা সংশোধন করা হোক। প্রকৃত দুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই ভাতা পাবেন, এটাই প্রত্যাশিত।