বাংলাদেশে তেল-গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও শুধু অনুসন্ধানে পিছিয়ে থাকার কারণে বাংলাদেশ তার সেই বিপুল সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। স্বাধীনতার পর দেশে মাত্র ৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। অথচ প্রায় একই সময়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকায় ১৬০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের স্তরে তেল পাওয়া গেছে, বাংলাদেশেও এ ধরনের ৪৯টি ভূ-কাঠামো রয়েছে। কিন্তু তেল অনুসন্ধানে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বাংলাদেশের এভাবে পিছিয়ে পড়ার জন্য অতীতের বিভিন্ন সরকারের অদূরদর্শিতাকেই মূলত দায়ী করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিময় নেতৃত্বের কারণে এই ক্ষেত্রটি আজ অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নতুন মাত্রা পেয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার মাত্র তিন বছরে ৯টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছিল। আর শেখ হাসিনার ১৭ বছরের শাসনামলে কূপ খনন করা হয়েছে ৩৩টি। বাকি সরকারগুলোর আমলে কূপ খনন হয়েছে মাত্র ২৬টি। কূপ খননের দিক থেকে দেশ সবচেয়ে পিছিয়ে গেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে। জিয়া ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো ১৬ বছরে কূপ খনন করেছে মাত্র আটটি। কূপ খনন করার জন্য যে ২ডি ও ৩ডি সিসমিক সার্ভের প্রয়োজন হয়, সেগুলোও ঠিকমতো করা হয়নি। সেই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে বর্তমান সরকার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শুধু স্থলভাগেই নয়, সাগরেও চলছে মাল্টিক্লেইন সার্ভে। এসব জরিপের তথ্য পেলে অনেক বহুজাতিক কম্পানিও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে এগিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গ্যাসনির্ভর শিল্প-কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের ব্যবহার তো আছেই। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। একসময় শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট শহর ও ময়মনসিংহের অংশবিশেষে গ্যাসের সরবরাহ ছিল। এখন সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনাসহ আরো অনেক জেলায়ই গ্যাস পৌঁছে গেছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সব শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়।
এ জন্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ বাড়াতেই হবে। সে জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অনুসন্ধান ও উত্তোলনের আয়োজন।
আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা উত্তরোত্তর আরো জোরদার করা হবে। সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি আমাদের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তাই স্থলভাগের পাশাপাশি সাগরেও তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান দ্রুততর করতে হবে। দেশে উন্নয়নের যে গতি সূচিত হয়েছে, তাকে আরো টেকসই ও বেগবান করতে হলে নিজস্ব তেল ও গ্যাসের মজুদ কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।