দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। কল্পনাকে হার মানিয়ে পদ্মা নদীর ওপর সেতু তৈরি হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ তৈরি হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক চার লেন, আট লেনে রূপান্তর করা হয়েছে ও হচ্ছে।
পুরনো রেলপথ সংস্কার করে চালু করার পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ তৈরি হচ্ছে। রাজধানীতে মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও।কিন্তু তার প্রায় উল্টো চিত্র আমরা দেখি গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে।প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামে যাওয়ার সড়কটি এখন স্থানীয় লোকজনের প্রধান একটি দুর্ভোগের কারণ।চিলমারী-কুড়িগ্রাম সড়কে উপজেলার ধামশ্রেণি এলাকার বটেরতল থেকে নাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়ে।শুধু কুড়িগ্রাম নয়, সারা দেশেই গ্রামীণ সড়ক কিংবা সেতুর এমন দুর্দশা চোখে পড়ে।গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ ধরনের অনেক খবর প্রকাশিত হয়। সোমবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাজীপুর গ্রামের মুসুল্লিবাড়ীসংলগ্ন কুকুয়া নদীতে নির্মিত লোহার সেতুর মাঝখানটা দেবে গেছে চার বছর আগে।এখন পর্যন্ত সেতুটি মেরামত না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই ইউনিয়নের ছয় গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয় এবং ২০২০ সালের ১২ মার্চ সেতুটির মাঝ বরাবর দেবে যায়। পরে দেবে যাওয়া অংশে গাছের গুঁড়ি ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।বছরখানেক আগে দেবে যাওয়া অংশটি পুরোপুরি ভেঙে নদীতে পড়ে গেলে দুই পারের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।অভিযোগ রয়েছে, শত শত কোটি টাকা খরচ করে সড়ক বা সেতু নির্মাণ করা হলেও সেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, ওপরের খবর দুটি সে সাক্ষ্যই দেয়। মাত্র ১৫ বছরে একটি সেতু কেন এভাবে ধসে পড়বে?সামান্য খরচে যে সড়কটি সংস্কার করা যেত, বছরের পর বছর সংস্কার না করায় এখন তা প্রায় নতুন করে বানাতে হবে। এতে সরকারের খরচের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকেও দীর্ঘ সময় ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। আমরা আশা করি, কুড়িগ্রামের সড়ক এবং বরগুনার সেতুটি দ্রুততম সময়ে নির্মাণ করে জনভোগান্তি কমানো হবে।