রাজধানী শহর থেকে একেবারে মফস্সল শহর—সবখানেই সাধারণ মানুষকে নিয়মিত ছিনতাইয়ের শিকার হতেই হচ্ছে। ছিনতাইকারীরা এত বড় কোনো অপরাধী না যে তাদের ধরা সম্ভব হবে না।
কিন্তু সেই কাজেই পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, পুলিশের সদস্যরাও কেউ কেউ ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়াকে যুক্ত করা এক সেতু এখন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্ত দুই থানায় পড়লেও উভয় থানার পুলিশই এখানে নির্বিকার।
প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বানার নদের ওপর নির্মিত অ্যাডভোকেট রহমত আলী সেতু শ্রীপুর ও কাপাসিয়াকে যুক্ত করেছে। সেতুর এক প্রান্তে শ্রীপুরের বরামা, অন্য প্রান্তে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী এলাকা। দিনের বেলায় নান্দনিক সুন্দর ও দর্শনার্থীদের জন্য প্রিয় এ সেতু দেখে বোঝার উপায় নেই, রাতের বেলা সেটি কী ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা নামলে এ সেতু হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য।
অনেকটা পুলিশি স্টাইলে সেখানে ছিনতাই করা হয়। এক ভুক্তভোগীর ভাষ্য, সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছার পর সবুজ রঙের লেজার লাইটের ইশারায় তাঁকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। পুলিশের সংকেত ভেবে তিনি মোটরসাইকেল থামান। এর মধ্যে কয়েকজনের একটি দল এসে তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মানিব্যাগসহ টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়।
এরপর তাঁকে মারধর করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। আরও ভুক্তভোগীর বক্তব্যে এমন বর্ণনা উঠে এসেছে। তার মানে একটি সংঘবদ্ধ দল পরিকল্পিতভাবে এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ফলে রাতে ওই সেতুতে একা মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে।
সেতুর অদূরে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও কোনো কিছুই যেন তারা জানে না। থানা–পুলিশের বক্তব্য শুনলে মনে হবে, সেখানে যেকোনো কিছুই ঘটছে না। কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবির বলেন, ‘আমাদের টহল পুলিশ রয়েছে। এ ধরনের ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সেতুটিতে দিনের পর দিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে আর পুলিশ কোনো কিছু জানবে না, বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই সেতুকে কি তারা ছিনতাইকারীদের কাছে ‘উন্মুক্ত’ করে দিয়েছে? মানুষের জানমালের নিরাপত্তাই যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে তারা সেখানে কী করছে। এখন তারা কী করে, সেটি দেখার অপেক্ষা।