কিডনি রোগ সারা পৃথিবীতেই বাড়ছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে। কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ দশম স্থানে রয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ১৮তম কারণ ছিল কিডনি রোগ। আর ২০২০ সালে এটি মৃত্যুর ১১তম কারণে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার শুরু হওয়া কিডনি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের দুই দিনব্যাপী ১৯তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বক্তারা জানান, কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় অর্ধলাখ মানুষের মৃত্যু হয়।অথচ দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এখনো এই রোগের আধুনিক চিকিৎসা এবং ডায়ালিসিসসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা সহজলভ্য নয়।
নানা কারণে বাড়ছে কিডনি রোগ। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার, ভেষজ ওষুধের ব্যবহার, দূষিত পানি পান, ভেজাল খাদ্য গ্রহণসহ আরো অনেক কারণ রয়েছে কিডনি রোগ বৃদ্ধির পেছনে।জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশদূষণও এই বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। সম্মেলনে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো পর্যায়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত।
তাদের মধ্যে প্রতিবছর কিডনি বিকল হচ্ছে ৪০ হাজার মানুষের। কিডনি বিকল এসব রোগীর ৭৫ শতাংশই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন না করাতে পারার কারণে। অথচ ক্রমবর্ধমান এই স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশে দক্ষ চিকিৎসকের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি আছে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব।জানা যায়, বর্তমানে দেশে ১৪০ জন নেফ্রোলজিস্ট আছেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক ১৬ জন, ২২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ৩৬ জন সহকারী অধ্যাপক। কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ-সুবিধা আরো কম।
প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনিশিয়ানেরও অভাব রয়েছে। আইনি জটিলতাও প্রতিস্থাপনের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। অথচ ডায়ালিসিসের তুলনায় প্রতিস্থাপন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি চিকিৎসায় অধিক গ্রহণযোগ্য ও সুলভ পদ্ধতি।দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন করা না গেলে যত দিন সম্ভব ডায়ালিসিসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ডায়ালিসিসের সুযোগও অত্যন্ত সীমিত। যে কয়টি সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের সুযোগ আছে, সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ব্যয় অনেক বেশি, যা বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে।কিডনি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।এসব উদ্যোগের মধ্যে থাকবে—অন্ততপক্ষে জেলা পর্যায়ে কিডনি ডায়ালিসিস সুবিধা সহজলভ্য করা, উপজেলা পর্যায়ে কিডনি চিকিৎসায় সক্ষম চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দক্ষ নার্স ও টেকনিশিয়ানের সংখ্যা বাড়ানো।পাশাপাশি প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন সংশোধনের মাধ্যমে সঠিক আইনগত ও পেশাগত কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, যার মাধ্যমে কিডনিদাতা ঠিক করার পাশাপাশি সুনিয়ন্ত্রিত প্রতিস্থাপনকে এগিয়ে নেওয়া হবে।