গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই দুটি গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের সময় আহত ব্যক্তিদের প্রতি চারজনের একজন তীব্র মাত্রার বিষণ্নতায় ভুগছেন। অঙ্গহানি, চিকিৎসার অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা, বঞ্চনা ও মৃত্যুজনিত শোকের মতো অভিজ্ঞতা এই মানসিক রোগের অন্যতম কারণ।
শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও চিকিৎসা প্রয়োজন।
তা না হলে মানসিক স্বাস্থ্যও একসময় জীবন বিপন্ন করে দিতে পারে, প্রাণঘাতীও হতে পারে। তা ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও সম্পর্কিত। মানসিক স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার সঠিক চিকিৎসা না হলে তা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা জরিপটি পরিচালিত হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৫৫ জনের ওপর। গবেষণায় উঠে এসেছে, আহত ব্যক্তিদের ২৫.৫ শতাংশ মাত্র স্বাভাবিক অবস্থায় আছে, ১০.৯ শতাংশ মৃদু বা লঘু, ২১.৮ শতাংশ মাঝারি, ১৪.৫ শতাংশ গুরুতর বা তীব্র এবং ২৭.৩ শতাংশ চরমভাবে বিষাদগ্রস্ত।
অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন তীব্র বিষাদগ্রস্ত। আহত ব্যক্তিদের বয়স ১৪ থেকে ৫০ বছর। এর মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২২ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ তাদের সামনে প্রায় পুরো জীবনই অপেক্ষা করে আছে। সঠিক চিকিৎসা না হলে তাদের সেই জীবন অত্যন্ত দুর্বিষহ হতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আর আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন ৩১ জন রোগীর ওপর বিএসএমএমইউ পরিচালিত দ্বিতীয় গবেষণায় উঠে এসেছে, আহতদের ৬৫ শতাংশেরই ট্রমা-পরবর্তী বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ তারা বারবার সহিংসতার স্মৃতিতে আতঙ্কিত বোধ করে। সারাক্ষণই এক ধরনের ভীতির মধ্যে থাকে।
নিজের জীবন বিপন্ন করে যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাফল্য এনে দিয়েছেন, আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।