সাম্প্রতিক সময়ে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে হত্যার ঘটনা অনেক বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, গত ১০ বছরে গণপিটুনির নামে হত্যা করা হয়েছে ৮৯৫ জনকে। গত বছর এমন নৃশংস ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। করোনার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় চলতি বছরের মধ্যভাগ পর্যন্ত গণপিটুনির ঘটনা কিছুটা কম ছিল। সম্প্রতি আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায়। ধর্ম অবমাননার গুজব রটিয়ে আবু ইউনুছ মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমন বীভৎস ঘটনায় স্থানীয় বিবেকবান মানুষের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ স্তম্ভিত।
তথাকথিত গণপিটুনির ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর একটি বড় অংশের পেছনে থাকে খুনের পরিকল্পিত উদ্দেশ্য। হুজুগ সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়। পরিকল্পনাকারীর লোকজন ছাড়া যারা এই গণপিটুনিতে অংশ নেয়, তারা কখনো ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না। সমাজবিজ্ঞানীরা এসব ঘটনার জন্য সামাজিক অস্থিরতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, গুজব, উগ্রতা, সুশিক্ষার অভাব—এমন অনেক কিছুকেই দায়ী করছেন। এগুলো কিভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
তার আগে ‘গণপিটুনি’ নামের পৈশাচিকতা রোধে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। পিটিয়ে হত্যার এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বলা হয়েছে, কাউকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হলে তা খুন হিসেবে গণ্য হবে, যার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু এসব খুনের ঘটনায় দ্রুত বিচার বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির বিরল। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী এলাকায় ছয় কিশোর শিক্ষার্থীকে ‘ডাকাত’ বলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তারপর সাত বছর পার হলেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। আর বেশির ভাগ ঘটনায় ‘কারা হত্যাকারী জানা যায়নি’ বিধায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনা রোধে গণপিটুনির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ হাইকোর্টের দেওয়া পাঁচ দফা নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন