বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। গত এক দশকে মানুষের মাথাপিছু আয় চার গুণ বেড়ে দুই হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিদেশি ঋণের জন্য হা-পিত্যেশ করা বাংলাদেশ এখন অন্য দেশকে ঋণ দেওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। ফলে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে একসময় যে বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বপরিসরে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এরই প্রতিফলন দেখা গেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডে। গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন প্রান্ত এবং সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি এই সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত হন।
সোয়া দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন, রোহিঙ্গা সমস্যা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, নিউ ইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা, সেনাবাহিনীতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত গবেষণার প্রয়োজনীয়তা, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিচারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য এখন রীতিমতো গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের পাশাপাশি তারা এখন সন্ত্রাস ও খুনাখুনিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা মাদকপাচারের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করে এমন কিছু সংস্থা সম্পর্কে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে এ দেশে রাখতে পারলেই তারা বেশি খুশি হয়। এটি তাদের কাছে একটি ব্যবসা হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দ্রুততর করার আহ্বান জানান। দেশে এরই মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি জমে উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন নিয়েও নানা রকম বক্তব্য আসছে। এসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু নির্বাচন হয়েছে, কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। মহামারির মধ্যেও ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। তার পরও কোনো কোনো মহল নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে চায়। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠন করা হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতি তারই প্রমাণ। এ জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সবারই সমীহ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, শান্তি ও স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে দেশ আরো এগিয়ে যাক।