সারা পৃথিবীতে এখনো সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে চার কোটি এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। এরই মধ্যে অনেক দেশে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ তীব্রতা পেয়েছে। কার্যকর প্রতিষেধক বা টিকা এখন পর্যন্ত হাতে আসেনি। কবে আসবে, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশেও দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় বস্তিবাসীর ৭৪ শতাংশের শরীরে এবং বস্তির বাইরে রাজধানীবাসীর ৪৫ শতাংশের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তার অর্থ এই পরিমাণ মানুষ কোনো না কোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরে সুস্থ হয়েছে। আরো অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আক্রান্তদের ৮২ শতাংশের শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।
ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং তাদের দ্বারা অন্যরা সংক্রমিত হয়েছে। সেই গবেষণার পর থেকে গত দুই মাসে সংক্রমণ ও অ্যান্টিবডি তৈরির হার নিশ্চয়ই আরো বেড়েছে। এর অর্থ ঢাকার দুই কোটি অধিবাসীর মধ্যে এক কোটিরও বেশি মানুষ এরই মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি শরীরে থাকলে দ্বিতীয়বার কেউ আক্রান্ত হবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতিও খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অনেক দেশেই সুস্থ হওয়া রোগীকে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, নিরাপদ কোনো ভ্যাকসিনের নাগাল না পাওয়া পর্যন্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলাটা অত্যন্ত জরুরি।
এর মধ্যে আছে সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক যে সেসব নিয়ম-কানুন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছে। যানবাহনে আবার গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। হাট-বাজার ও দোকানপাটে মানুষ ভিড় করছে। রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
নিছক কৌতূহল মেটাতে অনেকে রাস্তায় নেমে ঘোরাঘুরি করছে। আরো বেশি বিপজ্জনক হচ্ছে মাস্ক না পরা। এভাবে চললে দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণ কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। যেমন ঠেকাতে পারছে না ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলোও।
করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলায়। ওষুধের কার্যকারিতা বদলে যায়। এই অবস্থায় করোনা নিয়ে এ ধরনের গবেষণা আরো বেশি করে হওয়া দরকার। দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
সে ক্ষেত্রে কার্যকর টিকাপ্রাপ্তির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং করোনার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন