‘শিশু আইন’, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ এবং আরও নানা আইনের আওতায় প্রতিদিন থানা-পুলিশ ও আইন-আদালতের সংস্পর্শে আসে কয়েক শ নারী। তাদের অনেকেরই কোনো অভিভাবক নেই, কারও কারও আবার নিরাপত্তার অভাব। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষমাণ বিচারাধীন এসব মহিলা ও কিশোরীকে জেলখানার বাইরে মুক্ত, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে থাকা–খাওয়ার বন্দোবস্ত দিতেই তৈরি হয়েছে নিরাপদ আবাসন (সেফ হোম)। এমনকি তাদের জন্য এখানে শিক্ষা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও পুনর্বাসন সুবিধাও থাকার কথা। আর এসবই বিনা মূল্যে পাবে তারা।
গাজীপুরের এ রকমই এক আবাসন থেকে বুধবার গভীর রাতে পালিয়ে গেছে ১৪ কিশোরী। পরে জয়দেবপুর জংশন থেকে তাদের সাতজনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকি সাতজন এখনো নিখোঁজ। এই একই কেন্দ্র থেকে ২০১৮ সালে আরও একবার পালিয়েছিল ১৭ হেফাজতি।
থাকা, খাওয়া, বিনোদন—মৌলিক তিন সুবিধাই আছে। আবাসিকে কারাগারের মতো বন্দী করেও রাখা হয় না। ওরা তো দাগি আসামি নয়, আর এখানকার ঠাঁইও দীর্ঘস্থায়ী নয়। মুক্তি আপসেই আসবে। তারপরও কেন মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা? কেন পালায়? আর শুধু গাজীপুরের ওই কেন্দ্রই তো নয়, সারা দেশের আবাসনগুলোরই এই চিত্র। ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সেফ হোম থেকে পালিয়ে যায় সাত কিশোরী। ২০১৮ সালে হাটহাজারীর সেফ হোম থেকে পালিয়েছিল সাত কিশোরী।
প্রতিটি পলায়নের পরই গঠিত হয় তদন্ত কমিটি, তদন্ত শেষে যথারীতি তারা কিছু সুপারিশও করে। এসব সুপারিশে কমন কিছু প্রস্তাব ঘুরেফিরে আসে: নিচু সীমানাপ্রাচীর উঁচু করা, নিজস্ব জনবল ও নিরাপত্তারক্ষী সৃষ্টি, আনসার ও পুলিশ বৃদ্ধি, সেফ হোমের চারপাশে গার্ড হাউস বসানো, সীমানাপ্রাচীরের বাইরে পুলিশের যাতায়াতের উপযোগী সড়ক নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর ও আশপাশের গাছপালা কেটে ফেলা প্রভৃতি। এসবই নিরাপত্তা ক্রটিজনিত প্রস্তাব। এর বাইরে অন্য সমস্যাও আছে।
অভিযোগ আছে, থাকা–খাওয়ার সুবন্দোবস্তের কথা বলা হলেও আবাসনগুলোতে আদতে দুটোরই প্রবল অভাব রয়েছে। মানুষ যেকোনো কষ্ট সইতে রাজি, কিন্তু থাকা–খাওয়ার কষ্ট সে সইতে পারে না। ভেতরের পরিবেশও একটা বড় ব্যাপার।
বোঝাই যায়, গোটা ব্যবস্থাপনাতেই বড়সড় গলদ রয়েছে। তাই ছাড়া ছাড়া তদন্ত না করে, পুরো ব্যবস্থাটিরই ত্রুটিবিচ্যুতি খতিয়ে দেখার সময় এখন হয়েছে। না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।