২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সিডর। প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। অর্ধলক্ষ মানুষ আহত হয়েছিল। বহু গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল।
ভেঙে গিয়েছিল বেড়িবাঁধসহ রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট। ঘরবাড়ি, গাছপালা ধ্বংস হয়েছিল ব্যাপকভাবে। ভেসে গিয়েছিল জমির ফসল, পুকুর ও ঘেরের মাছ। বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল।
১৬ বছর পরও মানুষ সেই ভয়াল দিনের স্মৃতি ভুলতে পারেনি। এখনো উপকূলীয় মানুষ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুম এলেই একধরনের আতঙ্কে থাকে। আতঙ্কে থাকে এই কারণে যে এখনো উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। পর্যাপ্ত পরিমাণে গড়ে ওঠেনি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বা সাইক্লোন সেন্টার।গড়ে ওঠেনি গবাদি পশু রক্ষায় উঁচু টিলা।সিডরের আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি ছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা। এখানকার মানুষ তখন থেকেই বলেশ্বর নদের তীর রক্ষায় উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে এখানে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজে দুই দফায় চার বছর সময় বাড়ানো হয়।
জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করে ‘সিইআইপি’ কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তা হস্তান্তর করবে। কিন্তু নদীশাসন না করে নির্মিত বাঁধে এরই মধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর সকালে উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা আশার আলো মসজিদসংলগ্ন এলাকার প্রায় ৩০০ মিটার মূল বেড়িবাঁধের সিসি ব্লক ধসে যায়।এর আগের দিন রাতে মূল বাঁধের সামনে নির্মিত প্রায় ৪০০ ফুট রিংবাঁধসহ বহিরাংশের কমপক্ষে ১০ বিঘা জমি গাছপালাসহ বলেশ্বরে বিলীন হয়ে যায়।বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বরাবরই একটু বেশি। তার ওপর আছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ক্রমেই বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছে।তাই উপকূলীয় জনজীবন রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ আরো জোরদার করতে হবে। বেড়িবাঁধের প্রস্থ ও উচ্চতা বাড়িয়ে আরো মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে।বেড়িবাঁধ ও উপকূলীয় নদীর তীর ধরে বনায়ন করতে হবে। সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবনে গাছপালার ঘনত্ব ও বৈচিত্র্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও গবাদি পশুর টিলা তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করি, উপকূলীয় জনজীবন রক্ষায় সরকার আরো আন্তরিক হবে।