স্বাধীনতার পাঁচ দশক পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দেশ কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের কর্তৃত্ব স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে চলে যাওয়া এবং একটা দীর্ঘ সময় ধরে দেশে তাদের কর্তৃত্ব বহাল থাকা। এ সময়ে তারা স্বাধীনতার লক্ষ্য থেকে দেশকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেছে এবং দেশ কেবলই পিছিয়ে গেছে। সেই বিপরীত যাত্রা থেকে দেশকে উদ্ধার করেছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ আবার স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত পথে এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করার লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পনামাফিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি পরিকল্পিত কাঠামো করে দিয়ে যাচ্ছে, সেই কাঠামো ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী করণীয়, স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনকালে ২০৭১ সালে বাংলাদেশ কোথায় যাবে, ২১০০ সালে এই বদ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দারা যেন আরো সুন্দর জীবন পায়, তারও একটা পরিকল্পনা করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কাঠামোটা সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তনশীল। কারণ যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই সবাইকে চলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের বিকাশ, নব নব উদ্ভাবন আমাদের নতুন করে পথ দেখাবে, যার সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে।’
যে আদর্শ নিয়ে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, পঁচাত্তরের পর তা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। রাজাকার-আলবদরদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের পরিচয় দিতেও ভয় পেতেন। ইতিহাস বিকৃত করার বহু অপচেষ্টা হয়েছে। বলা যায়, বাংলাদেশকে আবার এক পশ্চাদগামী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানিয়ে দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তেমন এক পরিবেশ থেকে বাংলাদেশ আজ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, তার প্রধান দাবিদার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ তার হৃতগৌরব ফিরে পেয়েছে। বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন ইতিহাস জানতে চায়।
শিকড়ের সন্ধান করে বিজয়ের কথাটা চিন্তা করে নিজেদের গর্বিত মনে করে—এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে সক্ষম হব।’
এটা সত্য, স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় না এলে দেশ এত দিনে অনেক দূর এগিয়ে যেত। এত দিনে বাংলাদেশ হয়তো উন্নত দেশের কাতারেই থাকত। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন নতুন কোনো ষড়যন্ত্র না করতে পারে।