কাঙ্ক্ষিত উত্তরণের ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে এ বছরই। ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তকমা যে ঝেড়ে ফেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ—এ আলোচনা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় এ উত্তরণ ঘটারই কথা। এ জন্য বর্তমান সরকারের প্রয়াসকে ধন্যবাদ। অবশ্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই উত্তরণসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে কিছুটা দেরি হবে। অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব থাকার পরও আশা করা হচ্ছে, ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি আসবে।
উল্লেখ্য, তিনটি সূচকের যেকোনো দুটিতে উত্তীর্ণ হলেই গ্র্যাজুয়েশনের (উত্তরণ) ঘোষণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
এগুলো হলো—মাথাপিছু আয় এক হাজার ২২২ ডলারের বেশি থাকা, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট বা তার বেশি থাকা এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা কম। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের রয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৯০৯ ডলার, ৭২.৪ পয়েন্ট ও ২৭ পয়েন্ট। প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
জাতি হিসেবে এই উত্তরণ আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তার পরও বেশ কিছু বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে যেমন নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তৈরি পোশাক বাণিজ্যের শর্তাবলি পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে আরো স্বচ্ছতা দাবি করবে আমদানিকারকরা। তখন পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যেতে পারে।
ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বন্দরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির নিশ্চয়তা থাকলে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারবে।
আগের মতো সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য পাওয়া যাবে না। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাবমূর্তি উন্নয়নের ফলে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া সহজ হতে পারে। উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করতে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সুশাসন থাকা জরুরি।
এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ শুভ ফল বয়ে আনবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।