বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত কৃষিনির্ভর। দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। দেশে প্রতিবছরই আবাদযোগ্য জমি কমছে। লবণাক্ততা, খরা, বন্যাসহ প্রাকৃতিক নানা কারণে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ফসলের মোট উৎপাদন। নিরন্তর গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানী না হয়েও ব্রিডিং প্রশিক্ষণ নেওয়া কৃষক শুধু নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে যে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে দেখাতে পারেন, তার উদাহরণ খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের কৃষক আরুণি সরকার।
তিনি ও তাঁর কৃষক সহকর্মীরা মিলে ১০ বছরের চেষ্টায় আমন ধানের ছয়টি জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। কিভাবে ধানের ফলন বাড়ানো যায়, প্রাকৃতিক উপায়ে বালাই দমন করা যায়, প্রতিকূল অবস্থায়ও ধান কিভাবে টিকে থাকতে পারে—এই ভাবনা থেকেই নতুন জাতের আমন ধান উদ্ভাবন করে দেখালেন কৃষক আরুণি সরকার। আরুণি ও তাঁর সহকৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে যেখানে স্থানীয় জাতের আমন ধান সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ মণ উৎপাদিত হয়, সেখানে এই উদ্ভাবিত আমন ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৪ মণ। উপরন্তু এই ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয় না। এ ছাড়া ১৩ দিন টানা বৃষ্টির পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অন্যান্য জাতের ধানের গাছ পচে গেলেও আরুণি উদ্ভাবিত ধানগাছে পচন ধরেনি।
আরুণি সরকারের মতো বাংলাদেশের অনেক কৃষকের উদ্ভাবনী শক্তি দেশের কৃষি উৎপাদনে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা হরি ধানের কথা জানি। রাজশাহীর প্রান্তিক কৃষক নূর মোহাম্মদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ না থাকলেও আছে ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন। সংকরায়ণ করে একের পর এক নতুন ধান উদ্ভাবন করছেন তিনি। খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবনসহ সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে কৃষির উন্নয়নে আরো বেশি জোর দিতে হবে। সে কারণে কৃষির বহুমুখীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং দেশে ও বিদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারও সৃষ্টি করতে হবে।