মাদকের কারবার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব মাদকদ্রব্য। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। যেকোনো মাদক কারবারির প্রধান লক্ষ্য উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণরা। ফলে কিশোর-তরুণদের কাছেও মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠছে। এমনকি তরুণী-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনাভাইরাসে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে মাদক কারবারিরা।
অন্যদিকে মাদকাসক্তরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সমাজের বিত্তবান ও ভদ্রঘরের সন্তানদের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরাও সর্বনাশা এই নেশার জগৎ ঘিরে বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা বা জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর বিশেষ অভিযানে অনেক কারবারি গ্রেপ্তার ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬০০ ব্যক্তি নিহত হলেও কমেনি কারবার।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান স্তিমিত হয়ে এলেও ঢাকায় এখনো ব্যাপক অভিযান হয়। কিন্তু কড়াকড়ির মধ্যে অভিনব কায়দায় ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল ও আইস বা ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডি ও ডিএমটির মতো অন্তত ৩৫ ধরনের মাদকদ্রব্য রাজধানী শহরে ঢুকছে। জরুরি পণ্যের ট্রাক, লাশবাহী গাড়ি, তেলের লরি, অ্যাম্বুল্যান্স, পিকআপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সেগুলো আসছে। চলমান মহামারিতে মাদকের চাহিদা বেড়েছে বলেও খবরে প্রকাশ। কারবারিরা অনলাইনে মাদক বিক্রি করছে। নতুন মাদকসেবী তৈরিতে এই মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাদকের কারবার বন্ধ করা না গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘ্নিত হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রেপ্তারের পর জামিনে এসেও অনেকে আবার মাদক কারবারে জড়াচ্ছে। তারা কোনোভাবে সহজে স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারছে না।
তাই তাদের দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। জামিনে বেরিয়ে এলেও কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। তাদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদেরসহ অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাদের জন্য দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাদকের নেশায় ধ্বংস হয়ে যাক।
মাদকের বিস্তার রোধে কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন করে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করতে হবে।