দেশি জাত ফেলে বিদেশি জাত কোলে তুলে নেওয়া আধুনিকতা হলেও অনেক সময় তা আত্মঘাতী। ক্ষতিকর বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিস্তারের জন্য সংকুচিত হচ্ছে অনেক দেশি জাতের ফসল, গাছ ও প্রাণীর। বাংলাদেশসহ উন্নত বিশ্বের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা একযোগে বলেছেন, ৬৯ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রতিবেশব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। পরিবেশের ভারসাম্য এবং টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এসব প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর লালন–পালন এবং বিস্তার মোকাবিলা করার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের কৃষি এবং বন ও পরিবেশ দপ্তরের।
এ যেন কবির ভাষায় ‘জানালার জন্য বেচে দিলাম ঘর–দরজা’। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ৬৯টি বিদেশি প্রজাতির ৫১ শতাংশই মারাত্মক আগ্রাসী। ইংরেজ আমলে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বেশ কিছু বিদেশি প্রজাতির ফুল ও লতাগুল্মের গাছ আনা হয়। ফুলের সৌন্দর্যের কথা ভেবে আনা হয় কচুরিপানা, আসাম লতা ইত্যাদি। কচুরিপানার জন্য খাল–বিল, নদী, জলাশয়, পুকুর অস্বাস্থ্যকর, দেশি মাছের জন্য অনুপযোগী এবং নৌচলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
আশির দশকে সামাজিক বনায়নের নামে এবং পরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আকাশমণি, মেহগনিসহ দ্রুত বাড়ে এমন কিছু গাছ আনা হয়। বাণিজ্যিক কাঠের লোভে আনা হয় ইউক্যালিপটাস–জাতীয় গাছ। এসব বৃক্ষ যেখানে থাকে, সেখানকার মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ায় অন্য কোনো ফসল বা গাছ জন্মে না। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আনা হয় তেলাপিয়া, আফ্রিকান মাগুর ও গ্রাসকার্প–জাতীয় মাছ। এ–জাতীয় মাছ যে জলাশয়ে থাকে, সেখানকার দেশি মাছগুলো বাঁচতে পারে না। অবশ্য ইতিমধ্যে আফ্রিকান মাগুরের চাষ বন্ধ করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে কি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বেখবর?
গবেষণা যেখানে বলছে এসব আগ্রাসী বৃক্ষ ও প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশীয় প্রজাতিগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ নির্বাচক। কোনো এলাকার জলবায়ু, মাটি ও সমাজের প্রয়োজনেই সেখানে বৃক্ষ ও প্রাণীর বিকাশ ঘটে। কোনো এলাকার স্থানীয় শস্য ও ফলই সেখানকার অধিবাসীদের স্বাস্থ্যের উপযোগী। জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সনদেও স্থানীয় প্রজাতিগুলোর সুরক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এর অন্যতম স্বাক্ষরকারী।
বাংলাদেশের বন বিভাগ, কৃষি এবং মৎস্য ও পশুপালন বিভাগের দায়িত্ব হলো সরকারি–বেসরকারি সব স্তরেই চিহ্নিত আগ্রাসী প্রজাতিগুলোর লালন–পালন বন্ধে কাজ করা। সাধারণ মানুষকেও আপন স্বার্থেই সজাগ করার কাজটিও প্রাথমিকভাবে তাদের।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন