গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বেলেডাঙ্গা গ্রামে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা আজকের দিনে একেবারেই প্রত্যাশিত নয়। সেখানে চোর সন্দেহে এক ভ্যানচালককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা মতে, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি গত ১১ জুন তাঁর ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান।
পরদিন ভোর ৪টার দিকে সেখান থেকে চলে আসেন। তিনি বেলেডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছলে স্থানীয় ২০-২৫ জন তাঁর গতিরোধ করে ভ্যানচোর আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে কিল-ঘুষি মারে এবং লাঠি ও রড দিয়ে পেটায়। খেজুরের কাঁটা দিয়েও তাঁকে আঘাত করে। পরে মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে যায়। ১৪ জুন তিনি মারা যান।
আমরা বরাবর বলে থাকি, বাঙালি নিরীহ ও শান্তিপ্রিয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা কি তা প্রমাণ করছে? এ ধরনের নির্মম ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। ধর্ষণ-অপহরণের মতো জঘন্য ঘটনা এ সমাজে এখনো ঘটে। কিন্তু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে মেরে ফেলা কেন? প্রায় ক্ষেত্রেই নিহত ব্যক্তি যে নির্দোষ, তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই মানসিকতা মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী।
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া একটি গর্হিত সামাজিক অপরাধ। এজাতীয় অপরাধ যাতে কেউ না করে সে জন্য এখনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মানুষ যাতে হুজুগে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সচেতন করতে পারে। কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহজনক মনে হলে মানুষ তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে পারে। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারে। কিন্তু সন্দেহজনকভাবে গণপিটুনি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে যেকোনো নিরীহ মানুষও এমন নির্মমতার শিকার হতে পারে। মানুষ যাতে নিজের হাতে আইন তুলে না নেয় সে জন্য সারা দেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।