তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে এই প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে। ক্রমেই অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে।
এ ধরনের অপরাধের মধ্যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধসহ বহু রকম অপরাধই রয়েছে। দিন দিনই বাড়ছে এসব অপরাধের পরিধি।
২০২০ সালে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে যত সাইবার অপরাধ হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশের শিকার কিশোরীরা। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা ১১ ধাপে সাইবার অপরাধের শিকার হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে সাইবার অপরাধের শিকার ৬৭.৯ শতাংশ নারী। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের শিকারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে তারা। ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, পর্নোগ্রাফিকেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বেশ কিছু গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে রয়েছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ছেলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭২ শতাংশ, মেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৩ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহার শুরুর দিক থেকে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সীরাই এগিয়ে। এ বয়সেই ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে প্রায় ৫৬ শতাংশ। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সপ্তাহে ছয় থেকে সাত দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৫৮ শতাংশ।
সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৮ শতাংশ শিশু-কিশোর। এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু উল্টো পিঠেই রয়েছে একটি ভয়ংকর তথ্য। আর সেই তথ্যটি হচ্ছে, ইন্টারনেটে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯০ শতাংশ কমপক্ষে একবার পর্নোগ্রাফি দেখেছে।
এসব গবেষণার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরা বলছেন, ইন্টারনেট একটা আসক্তি। এই আসক্তি থেকে শিশুদের মুক্ত করতে আগামী দিনে পুনর্বাসনকেন্দ্র তৈরি করার প্রয়োজন পড়তে পারে বলে গবেষকদের অভিমত। চিন্তিত হওয়ার মতো খবর হচ্ছে, এসব শিশু ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে খাদ্যগ্রহণসহ মৌলিক পাঁচ বিষয়ে পিছিয়ে আছে বলে গবেষকদের ধারণা। এ ছাড়া বাড়ছে সাইবার বুলিং। এটি একটি অপরাধ।
এমন অনেক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। দেশের আইন আছে। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের।