English

21 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

বগুড়া বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যেতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

- Advertisements -

প্রায় দুই যুগ থেকে চালু না হওয়া বগুড়া বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যেতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি। ব্যবসার গতি ফেরার পাশাপাশি এক সময়ের শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়া দেশি-বিদেশি বিনোয়োগকারীদের জন্য অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
পাশাপাশি এই অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে বিদেশি ক্রেতাদের হাতে।
বগুড়া বিমানবন্দর নিয়ে এমনটিই প্রত্যাশা করছেন এখানকার শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে বিমানবন্দরকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার পর একমাত্র বগুড়াই হয়ে উঠতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
বগুড়ায় বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন জেলার ব্যবসায়ীদের সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতিসহ শিল্পোদ্যোক্তারা। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বহুদিন ধরে পড়ে থাকা বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক মানের খেলা আয়োজন করার জন্যও এ এলাকায় বিমানবন্দরটি চালু হওয়া দরকার।
বগুড়ার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাছুদুর রহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সব দিক থেকে এগিয়ে বগুড়া। বগুড়ার অনেক কৃষি পণ্য এখন বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তারাও এখানে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু করা জরুরি। কারণ প্রাচীন এই শহরটি ব্যবসা-বাণিজ্যে যতটা এগিয়েছে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ঠিক ততোটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সড়কপথে ঢাকা থেকে বগুড়া আসতে এখন কমবেশি ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। পথের ভোগান্তির কারণে বগুড়ায় কোনো বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও রপ্তানিকারক আসতে চান না। বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা না এলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন তেমন কাজে আসবে না। তাছাড়া অনেক মানুষ এখন বগুড়া থেকে সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করতে চান না। তারা বিমানে চলতে চান।
জানা গেছে, বাণিজ্যিক বিমান চালুর জন্য নব্বইয়ের দশকে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জায়গা জুড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শুরুর আগেই লোকসানের আশঙ্কায় সেসময় এ বিমানবন্দরটি আর চালু হয়নি।
এরপর কেটে গেছে দুই যুগ। এখনো বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালু হয়নি। বাণিজ্যিক বিমানের পরিবর্তে বর্তমানে সেখানে চলছে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ স্কুলের কার্যক্রম। শিল্পোদ্যোক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দ্রুত বগুড়ায় বাণিজ্যিক বিমান চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।
বগুড়ায় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও টুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসেন। বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে এখানে। আর এরইমধ্যে বগুড়ার পুন্ড্রনগরীখ্যাত মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত আসছে এবং আসবে।
চেম্বার অব কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার মধ্যে রয়েছে ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস ও ওয়ান ফার্মাসিটিক্যালস, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্ট, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস প্লান্ট, মোটরসাইকেল সংযোজন প্রতিষ্ঠান উত্তরা মোটরস, এবিসি টাইলস, ছোট বড় অসংখ্য জুট মিলসহ পেপার ও পার্টিকেল বোর্ডের কারখানা। এছাড়া বগুড়ায় চার ও পাঁচ তারকা মানের হোটেল রয়েছে তিনটি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর মতো সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ বগুড়ায় বিদ্যমান।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য ১৯৮৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সে সময় তা নানা জটিলতায় আটকে যায়। পরে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এজন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ২০০০ সালের দিকে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর ওড়েনি। পরে বিএনপি সরকারের সময় সেখানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। বর্তমানে সেখানে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্প মালিক সমিতির জেলা সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার আরও বিস্তৃত হবে। বর্তমানে এখানে যোগাযোগ, পরিবেশ, পাইপলাইনে গ্যাসসহ নানা বিষয়ে শিল্পের অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান আছে। শুধু বিমান যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না।
শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান বলেন, এ স্টেডিয়াম আইসিসি থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর মর্যাদা পেয়েছিল। ক্রিকেটারদের যাতায়াতের সমস্যাসহ নানা কারণে এ ভেন্যুতে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হচ্ছে না। এখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে গেলে নতুন করে আইসিসির কাছ থেকে স্বীকৃতি নবায়ন করতে হবে। বিমানসেবা চালু ছাড়া কোনোভাবেই তা আদায় করা সম্ভব নয়।
বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বগুড়ার চারতারকা হোটেল নাজ গার্ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোকরানা বলেন, বগুড়া উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। এখানে বিমানবন্দর না থাকায় এরইমধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন চট্টগ্রামে চলে গেছে। বগুড়ার সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এছাড়া সহজ রেলপথও নেই। তাই ভৌগোলিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে দ্রুত বিমানবন্দর চালু করা জরুরি।
আরেক পাঁচতারকা হোটেল মমইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হায়দার বলেন, এখানে বিমান নেই, এটা ভাবাই যায় না। জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনায় এনে বিসিএল প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা নিজস্ব হেলিকপ্টার চালু করেছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।
জানা গেছে, বর্তমানে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক রুটে সচল করতে তিন হাজার ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ, তেল সংরক্ষণাগার নির্মাণ এবং যাত্রী ও মালামাল ওঠানামাসহ অন্যান্য কাজে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমতি চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইতোপূর্বে চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি। অনুমতি মিললেই তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন