অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের মানুষের করভীতি আমরা দূর করতে পেরেছি। মানুষ এখন কর দিতে চায়। তবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল কর পরিশোধ পদ্ধতি সংযোজনসহ সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন সভাকক্ষে সেরা করদাতা সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, এনবিআরের সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিইও শেহজাদ মুনির, গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশিরউদ্দিন, ইউনিলিভারের সিইও কেদার লেলে প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
করযোগ্য সবাইকে করের আওতার আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর প্রদানে উপযুক্ত যারা, তাদের সবাইকে আমরা করের আওতায় আনতে চাই। করহার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করলে, আশা করি করনেট সম্প্রসারণ হবে। নতুন নতুন করদাতা করের আওতায় চলে আসবে।
কর-জিডিপি অনুপাতের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত অন্তত ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে থাকা দরকার। কিন্তু ব্যবধানটা অনেক বেশি। রাজস্ব আয় বাড়লেও কর-জিডিপির অনুপাত এখনও ১০ শতাংশে রয়ে গেছে। এই ব্যবধান কমানোর জন্য আমাদের ডিজিটাল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যেসব দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হলে অটোমেশনে যেতে হবে। শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে রাজস্ব আদায় করার মতো কোনো কিছু রাখা যাবে না। ডিজিটাল পরিশোধ পদ্ধতি এমনভাবে চালু করতে হবে, যাতে করদাতারা রাজস্ব পরিশোধ করার সাথে সাথে এনবিআরের সার্ভারে তথ্য চলে আসে। এর পাশাপাশি বন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক স্ক্যানার মেশিন বসানো অতি জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কেউ যেন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে না পারে, এর জন্য সব জায়গায় স্ক্যানার বসাতে হবে। তাহলে এক পণ্যের ঘোষণা দিয়ে ভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কমে আসবে। একইসাথে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারকে কর প্রদান করে, সেরা করদাতার সম্মাননা অর্জন করেছেন, তাদেরকে অভিনন্দন জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা সেরা করদাতার সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড পাচ্ছেন, দেশের রাজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদেরও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আশা করি অন্যদেরও ঠিকতম কর প্রদানে তারা উৎসহাতি করবেন।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, দেশের জনগন এখন কর প্রদানে এগিয়ে আসছে বলে আমরা বড় আকারের বাজেট দিতে পারছি। তবে করনেট আরও বাড়াতে হবে। এর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ কর পরিশাধ পদ্ধতি আরও সহজীকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। কর আহরণের ক্ষেত্রে রাজস্ব প্রশাসনের আরও দক্ষতা ও আন্তরিকতা দেখাতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, কর-জিডিপির অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সফটওয়্যার ডেভলপসহ অন্যান্য অটোমেশনের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজস্ব প্রশাসন কর্তৃক সরাসরি তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও সেকেন্ডারি উৎস থেকে করদাতাদের তথ্য পেতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে একদিনের জন্যও আমরা কর বা ভ্যাট অফিস বন্ধ রাখেনি। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির চাঙ্গা সচল রাখতে কর কর্মকর্তারা জীবন বাজি রেখে অফিস করছেন।
অনুষ্ঠানে ব্যাক্তি পর্যায়ে সেরা ৫ করদাতা ও কম্পানি পর্যায়ে সেরা ৫ করদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননাপত্র ও ট্যাক্সকার্ড তুলে দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাত হোসেন।