চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক মানোন্নয়নে আধুনিক ফিল্ম সিটি নির্মাণ করতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশকে (বিএফডিসি) ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। বিএফডিসির প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশন।
১৯৫৭ সালে বিএফডিসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় সাড়ে ৭ একর নিজস্ব জমিতে (তেজগাঁও, ঢাকা) বিভিন্ন সময়ে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, যা মূলত ইনডোর শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রের আউটডোর শুটিংয়ের জন্য একটি ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও কালিয়াকৈর উপজেলার কবিরপুর এলাকায় বিএফডিসির নিজস্ব ১০৫ একর জমিতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রস্তাবিত মোট ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
এ বিষয়ে বিএফডিসি পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইসহান আলি রাজা বাঙালী বলেন, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জুতসই জায়গা নেই। কিন্তু গাজীপুরে আমাদের ১০৫ একর জমি আছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম সিটি গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যে কোনো সময় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। ফিল্মের জন্য যত ধরনের আধুনিক সুবিধা দরকার সবই গড়ে তোলা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নানা উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যে ধরনের সুবিধা থাকা প্রয়োজন তা বর্তমানে এফডিসিতে নেই। প্রকল্পটিতে প্রস্তাবিত বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হলে নতুন ছবি আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যায়ন করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমানের ভাস্কর্য, চলচ্চিত্র জাদুঘর, পর্যটকদের আবাসনের জন্য কটেজ, থ্রিডি সিনেপ্লেক্স ও থিয়েটার নির্মাণের ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে। এ ফিল্ম সিটির মাধ্যমে পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে থ্রিডি সিনেপ্লেক্স, সেভেনডি থিয়েটার, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শুটিং স্পট, শুটিং ফ্লোর, যন্ত্রপাতিসহ স্টুডিও, ক্যাবল কার, ঝুলন্ত ব্রিজ, চলচ্চিত্র জাদুঘর ইত্যাদি নির্মিত হবে। এর ফলে উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিদেশে শুটিংয়ের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটির আউটডোর ও ইনডোরে শুটিং করতে পারবেন। বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারাও প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটিতে শুটিং করতে আগ্রহী হবেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য ফিল্ম সিটি আকর্ষণীয় ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হবে।
বিএফডিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মিত হলে দর্শকদের সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর চার বছরে সেটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফিল্ম সিটি নির্মাণের লক্ষ্যে শুটিং স্পট ও ফ্লোর নির্মাণ। শুটিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও স্থাপন এবং শিল্পী-কলাকুশলী এবং পর্যটকদের জন্য আবাসন সুবিধা দেওয়া। ফিল্ম সিটিতে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ইকোপার্ক ও ল্যান্ডস্কেপিংসহ থ্রিডি ও সেভেনডি থিয়েটার এবং ফোর কে রেজুলেশনের সিনেপ্লেক্স থিয়েটার নির্মাণ করা। এছাড়াও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ ও আগ্রহ বাড়াতে এবং এ শিল্পকে সুদৃঢ় করা, করপোরেশনের রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং বিদেশে শুটিংয়ের পরিবর্তে ফিল্ম সিটিতে শুটিং করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।