সরকারের সাশ্রয় নীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দরের এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে কমেছে গ্যাস সরবরাহ। কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। অনুসন্ধান বলছে, দিনে অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কম সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। তাই সহসা লোডশেডিং থামবে বলে আশা করা হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারের এই সাশ্রয়ের কথা উল্লেখ করে জনগণকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
গত ২৯ জুন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ৩ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। তাতে আমদানি করা গ্যাস অর্থাৎ এলএনজি ছিল ৮৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর থেকে প্রতিদিনই গ্যাস সরবরাহ একটু একটু করে কমানো হয়েছে।
আজ গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ২ হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা বলছে, আজ সোমবার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জুন ছিল ১ হাজার ৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। এই দুই দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমাতে দেখা গেছে। এই গ্যাস-রেশনিংয়ের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। এবার তা হতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি।
যদিও সরকারি সূত্রগুলো দাবি করছে, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেখান থেকে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এলএনজির নিয়মিত সরবরাহ চুক্তিতে কাতার এবং ওমান ট্রেডিংয়ের ওপর ভরসা করছে সরকার।
উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় সারা দেশেই কম বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এটি ফোর্স লোডশেডিং। অর্থাৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ালে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন পড়তো না। তারপরও করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীতে এতদিন যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেখান থেকেও সরে আসা হয়েছে।
ইস্কাটনের বাসিন্দা নেহা সুলতানা জানান, দীর্ঘদিন লোডশেডিং ছিল না। হুট করে এমন ঘটনায় আমরা বিভ্রান্ত। শুক্রবার থেকেই দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার আধঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জানান, বাসায় দুজন রোগী। এসি কিনেছিলাম। এখন তো ফ্যানই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। নতুন করে ভোগান্তিতে পড়লাম।
মিরপুরের এক বাসিন্দা জানান, আজ সারা দিন বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এমনিতে গরম। শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বাড়বে।
ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে, সব মিলিয়ে তাদের ৩০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে এলাকা ভেদে ৩০ মিনিট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, সকালে ১৪০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পেয়েছি। সন্ধ্যায় তা কমে ১২০০/১২৫০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে আমাদের ১২০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী বলেন, আমাদের ঘাটতির পরিমাণ ১৫০ থেকে ১৭৫ মেগাওয়াটের মতো। চাহিদা থাকে ১০০০ মেগাওয়াট। সকালে পেয়েছি ৮৫০ মেগাওয়াট। এখন চাহিদা কিছুটা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং বাড়বে। বিভিন্ন এলাকায় আধঘণ্টা লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে লোডশেডিংয়ের অবস্থা তুলনামূলক বেশি খারাপ। অনেক অঞ্চলে ৪-৫ ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ থাকছে না।