‘‘আমার সৌভাগ্য যে, এ কালের একজন মহানায়কের, মহামানবের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আমাদের সৌভাগ্য আমাদের সময়ে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। তখন বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ছিল না।এটা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুকালীন মাস আগস্ট। আর এক দিন পর এ মাস শেষ হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আমাদের মন থেকে চলে যাবে না। আজ যেহেতু সুযোগ পেয়েছি, আবারও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’’
বলেছেন বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবি, ভাষাসংগীতের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী’। জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে যুক্তরাজ্য বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ‘শোকের আগস্ট’ শীর্ষক বিশেষ ভার্চ্যুয়াল সভায় তিনি প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখছিলেন। ৩০ আগস্ট যুক্তরাজ্য সময় বিকেল চারটায় এ আলোচনা সভা হয়।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী আরও বলেন, ‘‘সিরাজউদ্দৌলার পতনের পরে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের সাথে যুক্ত করে নেয়া হয়। সুবে বাংলার রাজধানী বার বার সরানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে কোলকাতা এনে আবার সেখান থেকে নয়াদিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। বাঙালিদের কোনো স্থান ছিল না ভারতের জাতীয় জীবনে। তিনি জানান, গান্ধী সুবাস বসুকে চিত্তরঞ্জন দাশকে মাথা তুলতে দেন নি। গুজরাটি নেতা জিন্নাহ বাঙালি ফজলুল হককে, সোহরাওয়ার্দিকে মাথা তুলতে দেন নি। সোহরাওয়ার্দি পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। তাকে না দিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনকে বানানো হয়, যার মনে বাঙালির প্রতি দরদ ছিল না। পরে আওয়ামী লীগের ভিতর থেকে এক তরুণ আমাদের জাতির পিতা হয়ে উঠবে আমরা কল্পনাও করি নি। আমরা ভেবেছি আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক একটি দল থেকে যাবে। ১৯৫৫ সালে বঙ্গবন্ধুর চেষ্টায়, মাওলানা ভাসানির সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক দল হয়’’।
যুক্তরাজ্য বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলীমুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ও আলোচক হিসাবে অংশ নেন- প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুদ্দিন খান বলেন, ‘‘আমি কিছুক্ষণ আগে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবদুল গাফফার চৌধুরী সাহেবের বক্তব্য শুনলাম। আমি মনে করি বাংলাদেশ যত দিন থাকবে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু মানুষের স্মৃতিতে থাকবেন’’।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌছ সুলতান বলেন, ‘‘বৃটিশ কোলকাতাকে রাজধানী করেছিল কারণ তখনও বাংলা সম্পদশালী ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর পরাজয়ের পর লর্ড ক্লাইভ ৩০ হাজার পাউন্ড নিয়ে ফিরেছিলেন লন্ডন। তিনি বলেন, ১৮৫৭ সালে বিপ্লব বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল। বৃটিশ তাড়ানোর আন্দোলনগুলোর গোড়া ছিল বাংলায়’’।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, ‘‘শোকের মাস, আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন বাঙালি ও বাংলাদেশের চিন্তা করেছেন, একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের চিন্তা করেছেন’’।
আলোচনা সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট ও একুশে আগস্টসহ জাতির জন্যে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। ভার্চ্যুয়াল এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি মোবারক আলী, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও ইউকেবিডি টিভির চেয়ারম্যান মকিস মনসুর, বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্যতম সদস্য ও অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক মুহিব উদ্দিন চৌধুরী।
আলোচনায় আরো অংশ নেন, বিশিষ্ট কমিনিউটি ব্যাক্তিত্ব, ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ, ২৬শে টিভির সিইও জামাল আহমেদ খান, ওয়েষ্ট লন্ডন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, ষ্টোক অন টেন্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাজ্য অন্যতম সদস্য আলম হোসেন, বিশিষ্ট মহিলা নেত্রী ও খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম ট্রাষ্টের কর্নধার রিনা মোশাররফ, শেখ মুজিব রিসার্স সেন্টার ইউকে-র সেক্রেটারী আব্দুল আজিজ, মিসবাহ আহমেদ, শাহিনা চৌধুরী প্রমুখ।