ব্রিটিশ কলম্বিয়া সরকারের সম্মানজনক ‘মেডেল অব গুড সিটিজেনশিপ’ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিনুল ইসলাম। নিজ নিজ কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া সরকার। এ বছর ২১ জন এই পদকের মনোনীত হয়েছেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাদের হাতে এই পদক তুলে দেওয়া হবে। এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে সম্মানজনক এই পদক পাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্রিটিশ কলম্বিয়া সরকার জানিয়েছে, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের সারে শহরের বিদ্যায়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষা চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আমিনুল ইসলাম। তার উদ্ভাবিত ‘ব্রিটিশ কলম্বিয়া’ মডেলের মাধ্যমে সারে শহরের শিক্ষার্থীরা ১৭২টি মাতৃভাষা চর্চায় সম্পৃক্ত হতে পেরেছে। তার এই মডেলটি সারে শহরের বাইরের স্কুলগুলোতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমনকি ইউনোস্কের এডুকেশন ফের্মওয়ার্ক-২০৩০ এর জন্যও এই মডেলটি গৃহীত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে ২০২৩ সালে কানাডা ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। এক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া, বিভিন্ন মাতৃভাষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তার উদ্যোগে ২০১৩ সাল থেকে কানাডায় ‘মাতৃভাষা উৎসব’ পালিত হচ্ছে। মাতৃভাষার বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে তার উদ্যোগে ২০০৯ সালে কানাডার প্রথম মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ ‘লিংগুয়া অ্যাকুয়া’ স্থাপিত হয়।
মাতৃভাষার চর্চা ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ এসব অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটিশ কলম্বিয়া সরকারের সম্মানজনক ‘মেডেল অব গুড সিটিজেনশিপ’ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি।
সম্মানজনক এই অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মনে হয় কাউকে কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার অর্থ হচ্ছে সেই মানুষের কর্মদক্ষতাকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া। অ্যাওয়ার্ড একদিকে যেমন মানুষের কর্মদক্ষতাকে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসে, তার কাজের প্রতি উৎসাহিত করে, অন্যদিকে, পুরস্কারের মাধ্যমে কোনো কাজের সাফল্যকে স্বীকৃতি বা চিহ্নিত করলে তা অগ্রসরের পরবর্তী ধাপের জন্য অবশ্যই মাইলস্টোন বা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বা করবে বলে আমি মনে করি।’
উল্লেখ্য, আমিনুল ইসলাম মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি (এমএলএলডাব্লিউসি), কানাডার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিদেশে মাতৃভাষা বাংলার চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এমএলএলডাব্লিউসি। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা আদায়ের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় সংস্থাটিকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক-২০২৩ লাভ করে।
আমিনুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার বানিয়াগাঁতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জোনাব আলী। তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে কানাডায় অবস্থান করছেন। তবে, বিদেশে অবস্থান করলেও দেশ মাতৃকার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার টানেই বিদেশের মাটিতে মাতৃভাষার চর্চা ও প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন নিজ জন্মভূমিতে।