আজ ২৪ আগস্ট শহীদ আইভী রহমানের ১৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ভৈরব সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নারী নেত্রী উলফাতারা জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মোঃ জাকির হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোঃ অলিউর রহমান ।এছাড়াও অন্যান্যদেরমধ্যে আলোচনায় অংশ নেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেকুল, পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মোঃ ইমদাদুল হক চৌধুরী, দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামীম আহমেদ , সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কে এম হাবিবুর রহমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ রফিকুল হক, ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক হাসান মাহমুদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক মোঃ বাবুল মিয়া, দর্শন বিষয়ের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন, জীব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রদর্শক, মোঃ ফজলুল হক, প্রধান সহকারী মোকারম হোসেন ও কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি সাবিহা মাহবুব প্রভা ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ রফিকুল হক, গীতা পাঠ করেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান খোকন রায়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ জাকির হোসেন সহ বিভিন্ন আলোচক রা বলেন অকুতোভয় নারী নেত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক , বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন।
এরপর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৪ আগস্ট তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বক্তারা আরো বলেন আইভি রহমান ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব মো. জিল্লুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রথিতযশা এবং শিক্ষাবিদ। মা হাসিনা বেগম একজন আদর্শ গৃহিনী। ৮ বোন, ৪ ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন ৫ম। বিবাহিত জীবনে তিনি, এক ছেলে পাপন দুই মেয়ে তানিয়া ও ময়না এবং স্বামী জিল্লুর রহমানকে নিয়ে সংসারে সুখেই ছিলেন। এই নারী নেত্রীর একমাত্র ছেলে আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। স্বাধীনতার আগে আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার মধ্য দিয়ে অসম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙ্গালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তিনি তখন ছাত্রলীগের ১ম সারির নেত্রী এবং নীতিনির্ধারক। তিনি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাঙ্গালির স্বাধীকার আদায়ের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ও তার স্বামী জিল্লুর রহমান ভারত গিয়ে সশ্রস্ত্র ট্রেনিং নেন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে আইভি রহমান মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। রাজনীতি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মহিলা সংস্থা এবং জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তার উজ্জল ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধ্যন্য আইভি রহমান তার নিজ বাড়ি ভৈরবে ছিলেন জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্ব, ভৈরবের যুব সমাজ তাকে আইভি আপা বা ভাবী বলে সম্বোধন করতেন। তার প্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ ছাড়াও ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তিনি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
১৯৯৮ এবং ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিনি ভৈরবের বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়েছন। বন্যার নোংরা পানিতে নেমে জলাবদ্ধ মানুষ দুয়ারে দুয়ারে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। অকুতোভয় আজন্ম সংগ্রামী এ মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু বাঙ্গালি জাতি মেনে নিতে পারেনি। তেমনি পারেনি ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষও। আন্দোলন, সংগ্রামে আইভি রহমানের অবদানের কথা বাঙ্গালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। এ ছাড়াও কলেজের পক্ষ থেকে ভৈরব বাজার জিহাদী মসজিদে বাদ আসর মিলাদ মাহফিল শেষে তবারক বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মাহমুদা বেগম।