স্ত্রীকে ফিরে না পেয়ে দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এক যুবক। এ জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিরবাজার থেকে তিনজনের জন্য কাফনের কাপড়ও কেনা হয়। পরিকল্পনা ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ভাড়া বাসায় গিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন তিনি। তবে এর আগে তিনি নিজ ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে উদ্দেশ্য করে নিজের আত্মহত্যার কথা জানিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজ গন্তব্যের পথে। কিন্ত লাইভে এমন দৃশ্য দেখে কেউ একজন বিষয়টি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ জানায়।
পরে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত লাইভে আসা যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। এরপর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান ও ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামানের যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যুবকবে কাউন্সিলিং করেন তারা। অবশেষে আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ করে কৌশলে তাকে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। একইসঙ্গে যুবকের শ্বশুর, শাশুড়িসহ স্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে প্রায় চার ঘণ্টা ব্যাপক কাউন্সিলিং শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান, ফতুল্লা থানার ওসি রকিবুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ও ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত সমাঝোতা করে স্বামী-স্ত্রীকে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে তুলে দেন।
ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত জানান, শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকাল সোয়া পাচঁটার দিকে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ সংবাদ আসে যে এক যুবক দুই সন্তানসহ লাইভে এসে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। পরে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা ফেসবুক আইডির লিংকটি। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা যুবকের মোবাইল ফোন নম্বর। সেই নম্বরে যুবকের সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট কাউন্সিলিং করে তার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রস্তাব দিলে তার কথায় রাজি হয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন ফতুল্লা থানায়।
অপরদিকে স্ত্রীসহ যুবকের শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে আসা হয় ফতুল্লা থানায়। সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা আলোচনা শেষে রাত এগারোটার দিকে শ্বশুর-শাশুড়ি, স্ত্রীর সঙ্গে যুবকের সমাঝোতা করে দেওয়া হয়।
লাইভে আসা যুবক জানান, দশ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে চার বছর বয়সী একটি ছেলে ও নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যান। গত কয়েকদিন আগে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। সেটা জানতে পেরে তিনি তার শ্বশুরের দ্বারস্থ হলে শ্বশুর তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে তাড়িয়ে দেন। এতে করে তিনি সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীকে ফিরে পাবার কোনো সুরাহা না পেয়ে তিনি দুই সন্তানসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরিকল্পনানুযায়ী মৌচাকে একটি রুম ভাড়া নেওয়া হয়। সেখানেই একসঙ্গে ছেলে মেয়েকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য শহরের কালিরবাজার থেকে কেনা হয়েছিল তিনজনের জন্যই কাফনের কাপড়।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, আমার কর্মজীবনের সবচাইতে রিস্কি দিন ছিল এটা। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রিস্ক নিয়ে মেধার সবটুকু দিয়ে তিনজনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সামর্থ্য হয়েছি। কর্মজীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত: সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ওই যুবক, তার দুই সন্তান, স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নাম প্রকাশ করা হয়নি।